বিডি নিউজ আই, নিজস্ব সংবাদদাতা: ‘আগে আমি পুলিশের বড় দুশমন ছিলাম, পুলিশ বলতেই আমার সাথে লেগে থাকতো। এমন কোন এসপি নাই যার টেবিল আমি ভাঙ্গি নাই, এমন কোন ডিসি নাই যার টেবিল আমি ভাঙ্গি নাই। নিজাম, পলাশ ওরা পিচ্চি পিচ্চি ছিলো ওরা জানে। জেল খানা থেকে কোন আসামী আমি জামিন করে ছুটাই নাই। জেল খানায় গেছি, হাজার হাজার পোলাপান নিয়ে ঘেরাও করছি, ডিসি সাহেব এসে বলতো ভাই জামিনটা নেন। আমি বলতাম জামিন নামা পাঠায় দেন। তৈমুর আলম খন্দকার ছিলো আমাদের ফ্রী লইয়ার। ওনি আমাদের বিরুদ্ধে কেস করতো। শুনতাম সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ৪৯টা কেস খাইছি। কারণ কেস খাইলে খুশি হইতাম! কেন? কারণ কেস খাইলে পুলিশ টাকা দিবো। এবং পুলিশ আমাদের টাকা দিতো। কেনো দিতো, বলতো ‘ভাই জামিন টা নেন।’তখন বলতাম টাকা দেন জামিন নেই। কলেজে গিয়ে চুপচাপ টাকা দিয়ে আসতো আর আমরা জামিন নিয়ে আসতাম। কোর্টে আসলে উকিল বলতো ভাই কোন হইচই কইরেন না। উপর থেকে ডিসি কিছু দিবো আবার সেটাও খাইতাম। আমরা এভাবে রাজনীতি করছি।’
বুধবার (২৭ জুলাই) বিকেলে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের নবগঠিত কার্যনির্বাহী পরিষদের পরিচিতি সভায় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, এখন যেনো রাজনীতি কেমন যেনো হয়ে গেছে। চাই চাই খাই খাই ভাব। অনেকে মানচিত্রসহ খেয়ে ফেলতে চায়। বলে ‘কি করলাম পলিটিক্স করে’। আরে ভাই কি করলেন মানে। আপনি কি করলেন এটাই তো বড় পাওয়া। যানজটের শহর নারায়ণগঞ্জ, এই শহরে রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে কি পরিশ্রমটাই না করে আমাদের ট্রাফিক পুলিশ। সেদিন ঢাকায় যাচ্ছিলাম, দেখলাম ২০০ ট্রাক দাঁড়ায় আছে। কিছু টেংরা টেংরা কতগুলো মাদক খাওয়া পোলাপান ট্রাকগুলো বাড়ি দিচ্ছে আর টাকা তুলছে। দেখে খুব লজ্জা লাগলো, ঘৃন্না লাগলো। এই জন্য লাগলো যে, একটা মহিলা শেখ হাসিনা সব কিছু হারিয়ে একটা দেশের মধ্যে দুধ ঢালছে। আর ওই সকল লোকরা সেই দেশে চুন ঢালছে। তাদের বিরুদ্ধে তো কথা বলতেই হবে। সে আমি হই, আপনি হন, পুলিশ প্রশাসন হোক ‘আই ডোন্ট কেয়ার’।
শামীম ওসমান বলেন, সুইজারলেন্ড, জার্মার, ফ্রান্স ও ইতালির মতো দেশ থর থর করে কাপতে থাকে, বাংলাদেশ ১৭ কোটি মানুষের একটা দেশ। আমরা কিভাবে এড়িয়ে যাবো? আমার মনে হয় এই সময়টা হচ্ছে, সবাই মিলে হাতে হাত মিলিয়ে এই দেশটাকে বাচাঁনো। তবুও একটা কথা বলতে চাই, পদ্মা সেতু হইছে সবাই খুশি, আমিও খুশি। নারায়ণগঞ্জে লিংকরোড হবে আমি খুশি, মেডিকেল কলেজ বা ইউনিভার্সিটি হবে আমি খুশি। অনেকে এদিক ওদিক নিয়ে যেতে চায় পারে নাই, পারবেও না। কারণ ওইটা লিংকরোডের পাশেই হবে ইনশাআল্লাহ। যাই হোক আমি চাই আসলে আমাদের এখানে একটা লিংকরোড হোক।
তিনি বলেন, মানুষ উন্নয়ণ চায়, মানুষ ভালো জিনিস চায়। সবচেয়ে বেশী মানুষ যেটা চায়, সেটা হলো শান্তি। আমার দরজাটা খুলে শুনতে পাবো তাকে কেউ কিছু বলবে না। আমি জমি করবো, আমি বাড়ি করবো। আমি বাউন্ড হবো না যে, আমি ওর কাছ থেকে সিমেন্ট কিনবো। আমি সব হাটতে চাই। বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি বুঝি না। আমরা হয়তো ভালো দেশ গড়তে পারবো না। কিন্তু ভালো নারায়ণগঞ্জ গড়তে পারবো ইনশাআল্লাহ। কি চাই আমরা? মৃত্যুর পর যাতে মানুষ আমাদের জন্য একটা হাত তুলে, আমাদের জন্য একটু কাঁদে। যে, আল্লাহ তুমি ওরে মাফ করে দিও।
তিনি আরও বলেন, এখন দেখি, যে মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলে সেও মাদক বিক্রি করে। যে জমি নিয়ে কথা বলে সে অন্যর জমি দখল করে। এই বিষয়গুলি আমরা সবাই মিলে মোকাবিলা করতে হবে। একটা কথা মনে রাখতে হবে, এই দেশের জনগণ রাষ্ট্রের মালিক আমরা মালিক না। আমরা কেউ কর্মচারি কেউ আসছি সেবক হয়ে। আমিও বেতন পাই, প্রধানমন্ত্রীও বেতন পায়।
এমপি শামীম ওসমান বলেন, যাওয়ার সময় পুলিশ সুপার নারায়ণগঞ্জ সম্পর্কে ভালো কথা বলে গেলো। এটা আমাদের গর্বের বিষয়। আমি কখনো ভুলবো না আপনাকে। তবে আমার বিশ্বাস। নারায়ণগঞ্জের মানুষ কখনো আপনাকে ভুলবে না। আপনার কথা মনের মধ্যে গেথে রাখবে। মাদারীপুর শুধু আপনার জেলা না। নারায়ণগঞ্জও আপনার জেলা। নারায়ণগঞ্জের মানুষের কাছে একই ভাবে আপনি প্রিয় থাকবেন। আমি বলবো না আপনি একা ভালো করেছেন। আপনি একটা ভালো টিম পেয়েছেন বলেই আপনি ভালো কাজ করতে পেরেছেন। এই টিম টা এমন ভাবে যাতে কাজ করে, যাতে যাওয়ার সময় আমাদের কষ্ট লাগে।
এমপি বলেন, আজকে যে কমিটিটা হয়েছে পড়লাম আমি, দেখলাম। আমার মনে হয় যদি এই কটা মানুষ চেষ্টা করে নারায়ণগঞ্জ ভালো হয়ে যাবে। তাহলে আসলেই নারায়ণগঞ্জ ভালো হয়ে যাবে। ভালো করাটা খুব কঠিন একটা ব্যাপার না কিন্তু। একজন চাপ দিলে যদি আরেকজন উৎসাহ না দেয় তাহলে নারায়নগঞ্জ ভালো হয়ে যাবে। ভালো করার সব থেকে বড় অবদান হলো সাংবাদিকরা। আমি বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলবো আমাকে আপনারা তথ্য দেন যে, কে অপরাধ করে বা খারাপ কাজ করে। কেউ আমার সাথে না থাকলে আমি একাই যাবো। কারণ আমার লক্ষ্য একটাই, জনগণকে শান্তি দেয়া। মানুষকে খুশি করে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে খুশি করা। আমি পুলিশ প্রশাসনের কাছে এই বিষয়ে সহযোগীতা চাই।
তিনি বলেন, যে কমিটি হয়েছে সে কমিটি অনেক কাজ করবে। সমস্ত রাজনৈতিক প্রভাবের উপরে থেকে কাজ করবে। আপনারাই এটা প্রমান করবে যে ‘পুলিশই জনতা, জনতাই পুলিশ’। পুলিশ ভাইদের বলবো, মানুষের শেষ আশ্রয় স্থল পুলিশ। মানুষ যখন খুব বিপদে পরে তখন আপনাদের কাছে যায়। আপনাদের কাছে অনুরোধ থাকবে, আপনাদের কাছে যারা যায়, তাদের পারলে এক কাপ চা দিয়েন অথবা একটা বিস্কুট দিয়েন। আপনারা যদি বলেন আমি আছি আপনাদের পাশে, কিছু করতে পারেন অথবা না পারেন। ‘আমি আছি’ এই কথাটার অনেক দাম। তখন মানুষ যে আপনার জন্য দোয়া করবে, সেটা আপনাদের জন্য অনেক উপকার হবে। এসপি সাহেবের মতো ঠান্ডা মাথায় কাজ করার মানুষ খুব কম পেয়েছি। আজকে মেয়েরা এডিশনাল এসপি, এডিএম নারী, আমার বাসায় আমার মাথায় উপরে থাকে নারী। আজকে যে আমার মেয়ে কাল আরেকজনের ঘরের বউ হবে। পরশু আরেকজনের মা হবে। এই সৌভাগ্য কজনের হয়। তাই নারীদের সম্মান করা উচিৎ। সবশেষে আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য দোয়া চাই।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজ পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) ও জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ জায়েদুল আলম, কার্যনির্বাহী কমিটির প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ ক্লথ মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রবীর কুমার সাহা, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) মিডিয়া সেল এর চেয়ারম্যান ও জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের জেনারেল সেক্রেটারি তানভীর আহমেদ টিটু, নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আব্দুল হাই, নারায়ণগঞ্জ জেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান ও জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সালমা ওসমান লিপি, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট চন্দন শীল, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোসা. ইসমত আরা, জাতীয় শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের ভাইস প্রেসিডেন্ট কাওসার আহাম্মেদ পলাশ, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের ভাইস প্রেসিডেন্ট শাহ্ নিজাম, নারায়ণগঞ্জ বার এসোসিয়েশনের সভাপতি হাসান ফেরদৌস জুয়েল, নারায়ণগঞ্জ বার এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের ভাইস প্রেসিডেন্ট এড. মুহাম্মদ মহসীন মিয়া, জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের অফিস সেক্রেটারী ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘লাইভ নারায়ণগঞ্জ’র সিইও মোহাম্মদ কামাল হোসেন প্রমুখ।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...