নিজস্ব সংবাদদাতা : যুবলীগের নেতৃত্ব দিতে অতীত ইতিহাস ঘাঁটতে হবে। যারা যোগ্য তাদের কাছে দায়িত্ব দিতে হবে। যুবলীগের রাজনীতিতে যে কোন শ্রেণী পেশার লোকজনকে অর্ন্তভুক্তি করতে আপত্তি না থাকলেও মূল নেতৃত্বে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যাদের ত্যাগ ও ইতিহাস রয়েছে তাদের থেকেই নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার আহ্বান করেছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ন কবির মৃধা। যিনি মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতির পাশাপাশি বন্দরে যুবলীগ-ছাত্রলীগের রাজনীতিতে একজন আদর্শিক নেতা। টানা ৩ বার ক্ষমতার আসনে থাকলেও কোন প্রকার দলীয় প্রভাব বা ক্ষমতার অপব্যবহার করার মত কোন তকমা তাকে ছুইতে পারেনি। প্রয়াত ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক (পুরস্কার প্রাপ্ত) আশোক আলী মৃধার ছেলে হুমায়ন কবির মৃধা ৮০ দশক হতে রাজনীতিতে সক্রিয়। প্রভাবশালী সাংসদ শামীম ওসমানের অনুগামী। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে দলছুটের মত রং পাল্টিয়েছেন অনেক নেতা। কিন্তু হুমায়ন কবির মৃধাকে এক নীতি অনুসরণ পূর্বক রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে।
দুই বছর মেয়াদী বন্দর থানা যুবলীগের কমিটি এক যুগের বেশি সময় পাড় করে দিলেও তা পুনর্গঠনের কোনো তাগিদ নেই। ফলে এই অঞ্চলের যুবলীগের অস্তিত্ব এখন খাতা আর কলমেই সীমাবদ্ধ আর বাস্তবতায় যা তা। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে একই কমিটি থাকায় এবং মেয়াদোত্তীর্ণ এই কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠন না করার ফলে অনেকেই এখন এই সংগঠনটির রাজনীতিতে আগ্রহ হারাচ্ছেন। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে না নতুন কোনো নের্তৃত্ব। এতে করে পূর্বের কমিটির দায়িত্বে থাকা গুটি দু একজন লাভবান হলেও প্রকৃত ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আওয়ামী লীগই এমনই মনভার ব্যক্ত করলেন বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন। তিনি আরো বলেন, রাজনীতি হচ্ছে চর্চার একটি মাধ্যম। আর এই চর্চার অন্যতম অবলম্বন হচ্ছে সংগঠন। সঠিক সময়ে সংগঠনগুলো গঠন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নেতা তৈরি করতে হবে। আর সেটি হলে যে কোনো দলই সাংগঠনিক ভাবে শক্তিশালী হবে এবং সরবও থাকবে। কিন্তু এভাবে যদি দুই বছর মেয়াদী কমিটি দিয়ে এক যুগ বা দেড় যুগ পাড় করে দেওয়া হয় তাহলে নতুন নেতা তৈরি হবে না এবং রাজনৈতিক চর্চাও থাকবে না। ফলে নির্দিষ্ট মেয়াদী কমিটিগুলো যথা সময়েই গঠতান্ত্রিক মোতাবেক বিলুপ্ত করে দিয়ে নতুন করে কমিটি গঠন করাটা জরুরী।
সূত্র বলছে, ২০০৬ সালের ১৬ই মার্চ এড. হাবিব আল মোজাহিদ পলুকে সভাপতি ও খন্দকার হাতেম হুসাইনকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট বন্দর থানা যুবলীগের কমিটির অনুমোদন দেন বর্তমান জেলা যুব লীগের দায়িত্বে থাকা সভাপতি আব্দুল কাদির ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল। এর পর থেকে কমিটির বিষয় ঘুম ভাঙেনি দায়িত্বে থাকা ওই নেতাদের। তবে জেলা যুবলীগের সভাপতি আব্দুল কাদির ইতোপূর্বে এই কমিটি গঠন, ভাঙনের অন্তরায় রাজনৈতিক বিভাজনকেই দোষারোপ করেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, বিভিন্ন থানা ও ইউনিযনের যারা দায়িত্বে রয়েছেন তাদেরকে কমিটির বিষয় তাগিদ দিলেও আসতো না। কেউ কেউ জানাতেন, ‘শামীম ভাই কিছু না বললে আমরা কি করবো।’ এমনকি আমাদের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদলও বিষয়টি এড়িয়ে যেতেন।
বন্দরের সরকার দলীয় শীর্ষ নেতারা জানান ‘যুবলীগের রাজনীতিতে যে কোন শ্রেণী পেশার মানুষকে যুক্ত করতে সমস্যা নেই। আওয়ামী লীগ গণ মানুষের দল। সেখানে শ্রেণীভাজন করা যাবে না। সেরকম মানসিকতা সংকীর্ণতা পরিহার করতে হবে। কিন্তু কমিটির মূল নেতৃত্বে আনার ক্ষেত্রে যাদের ১৯৯১ ও ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস আছে তাদের কমিটিতে নিয়ে আসার অনুরোধ করছি। তারা কি করেছে সেই ইতিহাস যেন ঘেঁটে দেখা হয়। সেই সাথে যেন দেখা হয় যোগ্যতা, অভিজ্ঞতাও।’
বন্দর থানা যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের প্রতি বিশেষ আহবান জানিয়েছেন যে দ্রুত ইউনিয়ন কমিটি ঘোষণা করে থানা কমিটি করার জন্য।
আরো বলেন, ‘২০১৩ সালে যারা ধ্বংসাত্মক ও সহিংস রাজনীতি করে তখন হাতে লাঠি নিয়ে যুবলীগ জবাব দিয়েছে। কারা কোথায় কী করছে যুবলীগ সেসব তালিকা করে মোকাবিলা করেছে। সেজন্যই চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধ হয়ে যায়নি। শেখ হাসিনা বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকান্ড চালিয়ে যেতে পেরেছেন। চট্টগ্রামে যখন শেখ হাসিনাকে আক্রমণ করা হয়েছিল, গুলি করা হয়েছিল, তখন যুবলীগের কর্মীরা গুলি বুকে পেতে নিয়ে সামনে এগিয়ে এসেছিল। ৯১ সালে ঘূর্ণিঝড়ে শেখ হাসিনার নির্দেশে যুবলীগের কর্মীরা স্যালাইন নিয়ে গ্রামে গ্রামে সাধারণ মানুষের কাছে গিয়েছিল।’
বন্দর উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি ও মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব গাজী এম এ সালাম বলেন , ‘আমাদেরকে আদর্শিক চর্চা করতে হবে। আদর্শিক চর্চা করতে না পারলে রাজনীতি হবে না। আমরা নারায়নগঞ্জের প্রভাবশালী সাংসদ শামীম ওসমান ভাইয়ের হাতকে শক্তিশালী করার জন্য দ্রুত কমিটি ঘোষণা করা হোক। আগামী নির্বাচনে ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে অপরাজনীতির শক্তিকে দাঁতভাঙা জবাব দিতে হবে যুবলীগকে। সেকরম নেতাকর্মীদের দিয়ে যুবলীগকে সাজাত হবে।
রাজনীতিতে ‘অসুস্থ প্রতিযোগিতা’ চান না আনোয়ার হোসেন আনু ‘সাফল্য অর্জন করতে হবে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে। যোগ্যতা আর দক্ষতা থাকলে কাউকে ডিঙানোর প্রয়োজন হবে না। কাউকে ঘুষ দেয়া বা তদ্বির করার দরকার হবে না। কোন বড় ভাইয়েরও দরকার হবে না।’
রাজনীতিতে একে অপরকে ডিঙিয়ে ওপরে ওঠার ‘অসুস্থ প্রতিযোগিতা’ ছাড়তে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মহানগর শ্রমিকলীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নাসিক ২৬ নং ওর্য়াডের সাবেক কাউন্সিলর রাজপথ পথে হঠে আসা নেতা আনোয়ার হোসেন আনু।
মানবিক, বিজ্ঞানভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা আগামী দিনে যুবলীগের লক্ষ্য বলে জানান। প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে যুবসমাজকে সংগঠিত করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গঠনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। স্বল্পন্নোত রাষ্ট্র থেকে আজকে বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে আমরা উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের কাতারে। আমাদের চিহ্নিত করতে হবে আগামীর সংগ্রাম কী, প্রতিকূলতা কী।’
মুক্তিযুদ্ধের স্ব-পক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগ টানা তিনবারের মতো রাষ্ট্র ক্ষমতায়। অথচ ক্ষমতাসীন এই দলটির অন্যতম সহযোগি সংগঠন যুবলীগের বন্দর থানা নারায়ণগঞ্জের সব কটি কমিটির অবস্থাই লেজে গোবর। কোথাও দেড় যুগ, কোথাও এক যুগেরও বেশি সময় ধরে কোনো কমিটিই গঠন হয়নি। এরমধ্যে দুই বছর মেয়াদী বন্দর থানা যুবলীগের কমিটি এক যুগের বেশি সময় পাড় করে দিলেও তা পুনর্গঠনের কোনো তাগিদ বন্দরে যুবলীগকে শক্তিশালী করতে তরুন ও ত্যাগীদের মূল্যায়নের দাবী বন্দরের তৃণমূল নেতা কর্মীদের। বন্দরে দুঃসময়ে রাজপথে ত্যাগী নেতাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যুবলীগ নেতা খান মাসুদ।
২০০১ এর পর আওয়ামীলীগের দুঃসময়ে থেকে অদ্যাবধি জেল-জুলুম নির্যাতন উপেক্ষা করে দলকে সুসংগঠিত রাখতে রাজপথে যার ভূমিকা দৃশ্যমান। দলের প্রয়োজনে যার নেতৃত্বে হাজার হাজার যুবক মুহূর্তেই রাজপথে নেমে আসে।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের নিপীড়ন নির্যাতনের বিরুদ্ধে দলের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে নিজ কর্মীসমর্থকদের নিয়ে সামনের সারি থেকেই যিনি নেতৃত্ব দিয়ে রাজপথ কাঁপিয়ে ছিলেন। তিনি দলের প্রয়োজনে অদ্যাবধি রাজপথেই আছেন।
দলের সেই সংগ্রামী ধারাবাহিকতা এবং সকল অপশক্তিকে রুখে দিতে ও বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে এবং দলের স্বার্থে নতুন প্রজন্মের কর্মী বান্ধব নেতা, বন্দর থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, যুবলীগের নেতা খান মাসুদ’কে যুবলীগের কমিটিতে যথাযোগ্য মর্যাদায় মূল্যায়িত করে দলকে আরও শক্তিশালী করার দাবী বন্দরের তৃণমূল নেতা কর্মীদের।
উল্লেখ্য যে, বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের পুর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করতে সময় পার হয়েছে ৩০ মাস। সম্মেলনের পর ৩ মাসে পুর্ণাঙ্গ কমিটি করার কথা থাকলেও বিভিন্ন কারনে ৩০ মাস লেগেছে। আর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের কমিটিগুলো দ্রুত করার নির্দেশ দিলেও তা কালক্ষেপন হচ্ছে। তদ্রুপ বন্দর থানা যুবলীগের কাউন্সিল দ্রুত করার নির্দেশ থাকলেও একই পথে হাঠছেন। যুবলীগের ইউনিয়ন কমিটি করে দ্রুত থানা কমিটি করার জন্য কাউন্সিল দেয়ার নির্দেশ থাকলেও রহস্যঘেরাই রয়েছে সেখানে।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...