• সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:০৮ পূর্বাহ্ন
  • |
  • Bangla Converter
  • |
শিরোনাম :

বিবেকহীন প্রাণী জগৎ ও মানুষ

বিডিনিউজ আই ডেস্ক : / ২১২ বার পঠিত
প্রকাশিত সময় : শুক্রবার, ১৮ জুন, ২০২১
এ্যাডঃ তৈমূর আলম খন্দকার।

এ্যাডঃ তৈমূর আলম খন্দকার: পৃথিবীতে আঠার হাজার প্রাণী সৃষ্টি কর্তা সৃষ্টি করেছেন যাদের সকলেরই প্রাণ আছে, কিন্তু দৈহিক গড়নে কারো কারো সাদৃশ্য থাকলেও সব বিষয়ে হুবুহু মিল নাই। বাঘের সাথে বিড়ালের সাদৃশ্য থাকলেও কারো সাথে কারো মিল নাই বরং খাদ্যভাসে সকলেই আলাদা। প্রাণী বিজ্ঞানীদের মতে পৃথিবীতে ৩০০ প্রজাতির বানর রয়েছে যাদের সাথে একে অপরের সাদৃশ্য থাকলেও প্রকার প্রকান্তরে সকলেইর আলাদা রূপ আছে যা দেখে তাদের আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যায়। সমুদ্রের অতল গহব্বরে পাথড়ের নিচে থেকে শুরু করে পৃথিবীর সবচেয়ে উচু পর্বত শৃঙ্গ হিমালয়ে প্রাণীর অস্তিত্ব পাওয়া যায়, শুধুমাত্র বিভিন্ন গ্রহে শারিরিক কোন প্রাণীর অস্তিত্ব এখনো পাওয়া যায় নাই। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরানশরীফে যে সূত্র পাওয়া যায়, সেখানে সৃষ্টিকর্তা নিজেই বলেছেন যে, “তিনি পৃথিবীকে সৃষ্ট জীবের জন্য স্থাপন করেছেন” (সূত্র: সূরা আর রহমান, ১০নং আয়াত) [মাওলানা মোহাম্মদ মোবারক করীম (দেওবন্দ) কর্তৃক বঙ্গানুবাদকৃত নূরানী কোরআন শরীফ থেকে উদৃত]। পৃথিবীর শক্তিমান রাষ্ট্রগুলি কোটি কোটি বিলিয়ন ডলার খরচ করে চন্দ্র, মঙ্গল গ্রহ সহ অনেক গ্রহ পরিভ্রমন করে এখন পর্যন্ত কোন জীব বা প্রাণীর শারিরিক অস্তিত্ব খুজে পাচ্ছে না। প্রসঙ্গত: উল্লেখ করতে হয় যে, ইসলাম ধর্মের বিরোধীতাকারী বিধর্মীরা বহু চেষ্টা করেও পবিত্র কোরআনশরীফের কোন বাক্য মিথ্যা প্রমাণ করতে পারে নাই এবং পারবেও না, ইনশাআল্লাহ। কারণ আল্লাহপাক “কোরানশরীফ” সম্পর্কে নিজেই বলেছেন যে, “এ সেই কিতাব, যাহাতে কোন সন্দেহ নেই” (সূত্র: সূরা বাকারা ২নং আয়াত)।

মানুষের মূখের চামড়ার ভিতরে এক প্রকার ক্ষদ্রাদিত ক্ষুদ্র প্রাণী বসবাস করে বলে সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছে। পৃথিবীতে অনেক সৃষ্ট জীব রয়েছে যা এখনো বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করতে পারে নাই। নাম, ধরন, গঠন প্রকৃতি, আচরন, যাহাই হউক না কেন যার জীবন আছে সেটাই প্রাণী। প্রাণী জগতে দুই শ্রেণীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়। এক শ্রেণীর প্রাণীর স্বভাবগত ভাবেই হিং¯্র। আরেকটি শ্রেণী রয়েছে যারা আতœরক্ষার জন্য হিং¯্র হয়ে উঠে। জানামতে পৃথিবীতে এক প্রকার প্রাণী রয়েছে যারা শুধু বাতাস খেয়ে বেচে থাকে, কেহ মাংস ভোজী বা কেহ তৃণ ভোজী। সম্প্রতি কোভিড-১৯ নামক একটি জীবানু গোটা পৃথিবীতে আনচান করে ফেলছে। প্রশ্ন হলো দেখা যায় না, ছোয়া যায় না কোভিড বা করোনার কি প্রাণ রয়েছে? কোরানশরীফে স্বীকৃত মতে জ্বিন ও মানুষ আল্লাহ পাক সৃষ্টি করেছেন ইবাদতের জন্য। জ্বিন কিন্তু ধরা বা ছোয়া যায় না, তবে কথিত আছে যে জ্বিন যে কোন প্রাণীর রূপ ধারন করতে পারে। বিজ্ঞানী জগদীসচন্দ্র বসু ২০০ বৎসর পূর্বে আবিষ্কার করেছেন যে, “গাছের প্রাণ আছে”। পবিত্র কোরান শরীফে ১৫০০ বৎসর পূর্বে উদৃত করা হয়েছে যে, “গাছ সৃষ্টি কর্তাকে সেজদাহ করে” (সূত্র: আর রহমান, আয়াত নং-৬)।

মানুষ একপ্রকার প্রাণী বা জীব সকল প্রাণীর মতই যার জন্ম এবং মৃত্যু রয়েছে। তবে মানুষ সামাজিক জীব। কারণ মানুষ সমাজবদ্ধ হয়ে জীবন ধারণ করে। পৃথিবীর অনেক প্রাণী রয়েছে যারা দলবেধে চলা ফেরা করে। বিভিন্ন প্রজাতির পাখি রয়েছে যারা দল বেধে আকাশে বিচরন করে। তবে মানুষ আশরাফুল মাকলুকাত বা সৃষ্টির সেরা বিবেচিত হলো কেন? কারণ মানুষকে যে বিবেক, বুদ্ধি বা চিন্তা করার শক্তি দেয়া হয়েছে তা অন্য কোন প্রাণীকে দেয়া হয় নাই। মানুষ একটি জীব বা প্রাণী এবং মানুষের বিবেকসম্মত মানবিক গুনাবলীর কারণেই মানুষ সৃষ্টির সেরা। অথচ বিবেকহীনতা এবং অমানবিকতা টপ টু বটম অনেক মানুষের মধ্যেই বেশী যা হিংস্র প্রাণীর চেয়েও বেশী হিংস্র।

এখন বিবেচনায় নিতে হবে যে, শারিরিক গঠন মানুষ আকৃতির হলেও যদি তার মধ্যে বিবেক ও মানবিক গুনাবলী না থাকে তবে তাকে কি সৃষ্টির সেরা মানুষ বলা যায়? সৃষ্টিকর্তা তার প্রতিনিধিত্ব করার জন্য মানুষ সৃষ্টি করেছিলেন (সূত্র: সূরা বাকারা, আয়াত-৩০)। অথচ প্রতিনিধিত্ব করার পরিবর্তে পৃথিবীর যত ধ্বংস সব মানুষ দ্বারাই হয়েছে। একজন মানুষ এবং একজন পশু বা অন্য প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য কোথায়? মানুষের চেয়ে অনেক প্রাণীর দৈহিক ক্ষমতা বা সক্ষমতা অনেক বেশী। তারপরও মানুষ শ্রেষ্ঠ এই কারণে যে, সৃষ্টিকর্তা মানুষকে বিবেক ও বিচার বুদ্ধি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। দৈহিকভাবে সক্ষম শক্তিশালী হলেও যে মানুষের বিচার বিবেচনা করার বুদ্ধি নাই তাদেরকে প্রতিবন্ধী বলা হয়ে থাকে এবং প্রতিবন্ধীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য রাষ্ট্রীয় খরচে বিশ্বব্যাপী কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে। কিন্তু যে মানুষ তার বিবেকের সাথে প্রতারনা করছে সৃষ্টির সেরা “মানুষ” হিসাবে তার অবস্থান কোথায়?

চোখের সামনে অনেক ঘটনা ঘটছে, অথচ প্রতিবাদ করার মানসিকতা মানুষ হারিয়ে ফেলেছে, এ ঘটনাগুলি ঘটছে সবল দূর্বল সকলের বেলায়। সমাজে যারা প্রভাবশালী, ক্ষমতাবান তারাও তো একই রোগের রোগী। এখন কেহ “সত্য” বলতে চায় না। স্বার্থের দন্ধে ক্ষমতাশালীরা হয় সংঘাতে (ঈড়হভষরপঃ) জড়াচ্ছে, নতুবা আপোষ মিমাংশা (ঈড়সঢ়ৎড়সরংপ) করে চলছে, যার পিছনে একটিমাত্র কারণ স্বার্থ আর স্বার্থ। ন্যায় অন্যায়ের এখানে কোন বাছ বিচার নাই। সত্য মিথ্যার ধার এখন কেহ ধারতে চায় না। শুধুমাত্র স্বার্থ হাসিল হলেই হলো।

আইন যারা প্রনয়ণ করেন (ক্ষমতাসীনরা) তারা বলেন যে, “জনস্বার্থে আইন প্রনয়ণ করা হলো”। অথচ আইন যারা প্রয়োগ করে তারা যা করেন তা শুধু ক্ষমতাসীনদের তাবেদারী। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগে “বিবেক” কোন কাজ করে না। শুধু টু পাইস কামাই এবং ক্ষমতাসীনদের তুষ্ঠ রেখে সিনিয়র ডিঙ্গিয়ে প্রমোশন নেয়াটাই যেন আইন প্রয়োগকারীদের একমাত্র কাজ, যারা এ কাজটুকু করতে পারে না তাদের প্রমোশন বা লোভনীয় পদে পোষ্টিং হয় না। যারা বিরোধী দলে রয়েছে তারা আহত বা কোন প্রকার ক্ষতিগ্রস্থ হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে থানায় তাদের মামলা নেয় না। পুলিশ কথায় কথায় বলে যে, উপরের থেকে নির্দেশ নিয়ে আসেন। যত উপরে যাবেন সেখানেই ক্ষমতাসীনদের তাবেদার বেশী পরিমানে পাওয়া যাবে।

রাষ্ট্রের পক্ষে যারা দায়িত্ব পালন করেন তাদের প্রতিটি কর্ম জবাবদিহিতামূলক, সে জবাবদিহিতা শুধু উপরস্ত কর্মকর্তার নিকট নহে বরং নিজের বিবেকের নিকটও জবাবদিহিমূলক হতে হবে। কেহ যদি তার বিবেকের নিকট সঠিক সিদ্ধান্ত চায় তবে “বিবেক” সত্য ও ন্যায়ের পক্ষেই সাড়া দেয়। কোন মানুষের নিকট স্বার্থ যখন বড় হয়ে দেখা দেয় তখন বিবেক পরাজিত হয়ে পড়ে এবং তখনই ঘটে ক্ষেত্র বিশেষে বিপর্যয়।

বিজ্ঞানীরা রোবট আবিষ্কার করেছেন, ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী এর কর্মপরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষের মতই অঙ্গভঙ্গি করে রোবট নির্ধারিত কর্ম সম্পাদন করে যা মানুষের জবঢ়ষধপবসবহঃ হয়। কিন্তু মানুষের যা রয়েছে তা রোবটের নাই, তা হলো “বিবেক” এবং মানবিক গুনাবলী। একটি প্রোগ্রাম সেট করে রোবটকে যে নির্দেশাবলী প্রদান করা হয় এর বাহিরে সে কিছু করতে পারে না, কারণ তার নিজস্ব কোন চিন্তা শক্তি নাই, যা মানুষের মধ্যে রয়েছে এবং অন্যান্য প্রাণীর মধ্যেও নাই, অন্যান্য প্রাণী শুধু গতানুগতিক চলা ফেরা করতে পারে। আমাদের দেশের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনী একটি রোবটের মতই জড়পদার্থে পরিনত হয়েছে। মুষ্টিমেয় হাতে গোনা কিছু ব্যক্তি ছাড়া সকলেই রোবটের মত প্রোগ্রাম ফলো করে যারা বিবেক বা মানবিক গুনাবলী দিয়ে কোন কিছুই বিচার বিশ্লেষন করে না। তারা মনে করে যে, ক্ষমতাসীনদের আজ্ঞাবাহ থাকতে পারলেই অর্থনৈতিক দৃষ্টি কোন থেকে পরবর্তী বংশধর সহ তাদের ভবিষ্যত নিরাপদ থাকবে। তারা ন্যায় অন্যায়ের ধার ধারে না, ক্ষমতাসীনদের তোষামোদী ও তাবেদারীর প্রতিযোগীতায় তারা ব্যস্ত। রাজতন্ত্রীক রাষ্ট্র ব্যতিত পৃথিবীতে সর্বত্রই চলছে রাজনৈতিক সরকার। রাজনৈতিক সরকারগুলি মূখে মূখে গণতন্ত্রের কথা বললেও কোথাও কোথাও গণতন্ত্রের “গ” বলতে কিছুই নাই, মুষ্টিমেয় কিছু রাষ্ট্র ব্যতিত। লিখিত অলিখিত সকল রাষ্ট্রের সংবিধান রয়েছে, যাতে নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করা হলেও পরবর্তীতে নির্বতনমূলক আইন করে সংবিধানের মৌলিক অধিকার সম্মলিত ধারাগুলিকে প্রতিহত করা হয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে নেই বরং অগ্রগামী। এ কারণেই বিশ্ব পরিক্রমায় গণতন্ত্রের চর্চায় রাষ্ট্র তালিকায় বাংলাদেশের স্থান একেবারে তলানীতে। মন্ত্রীদের মূখে মূখে গণতন্ত্রের যে ফেনা উঠে, বাস্তবাতা তার উল্টো। যে রাষ্ট্রের প্রশাসন যন্ত্র ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মানবিক মূল্যায়ন ও বিবেক দ্বারা তাড়িত না হয়ে রোবটের মত তাদের দায়িত্ব পালন করে তখন সে রাষ্ট্রের ভিন্ন মতাবলম্বীদের পরাধীন রাষ্ট্রের নাগরিকের মত জীবনধারন করতে হয়। স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক হয়েও স্বাধীনতার সুফল দল মত নির্বিশেষে মানুষের গোরদরজায় পৌছায় না। তখন ক্ষমতাসীনদের সাথে রাষ্ট্রীয় সকল সুযোগ সুবিধা ও মর্যাদা ভোগ করে তাদের আজ্ঞাবহ আমলা অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় বেতনভুক্ত কর্মচারীরা, যারা তাবেদারীর দৌড় প্রতিযোগীতায় পিছিয়ে থাকে তাদের প্রমোশন বা লোভনীয় পদে পোষ্টিং উভয়ই ভাগ্যে জোটে না। একজন ব্যক্তি তখনই “মানুষ” হিসাবে বিবেচিত হবে যখন তার বিবেক ও মানবিক গুনাবলী স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর থেকে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করবে। একজন মানুষের প্রধান পরিচয় তার বিবেক ও মানবিক গুনাবলী। সাংবিধানিকভাবে “স্বাধীন” ও “নিরপেক্ষ” রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলি যখন “বিবেক” বিক্রি করে ফেলে তখন কাগজে কলমে যাহাই থাকুক না কেন বাস্তবে হয় তার উল্টো এবং বাংলাদেশে তাই ঘটছে।

লেখক: রাজনীতিক, কলামিষ্ট ও আইনজীবি (এ্যাপিলেট ডিভিশন)

মোবাঃ ০১৭১১-৫৬১৪৫৬
E-mail: taimuralamkhandaker@gmail.com

আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...


এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..