ঈদ (عيد) একটি আরবি শব্দ। শব্দটি খুশি, উৎসব এবং আনন্দ প্রকাশক অর্থেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। শব্দটি আরবি হলেও বাংলা, ইংরেজি, উর্দু, ফার্সি এবং হিন্দিসহ প্রায় সব ভাষাতেই শব্দ ও অর্থের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই।
ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায়, জিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখ থেকে শুরু করে ১২ই জিলহজ্ব দুপুর পর্যন্ত মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে প্রাণী জবাই করাকে ঈদুল আযহা বলা হয়।
বিশ্বের সকল দেশের মতো বাংলাদেশেও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য বজায় রেখে অনাবিল আনন্দের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হচ্ছে ঈদ।
মুসলমানদের ধর্মীয় প্রধান উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিডি নিউজ আই এর পক্ষ থেকে পাঠক, লেখক, শুভানুধ্যায়ী, বিজ্ঞাপনদাতাসহ সকলকে ঈদ শুভেচ্ছা জানাই।
‘আত্মত্যাগের মহিমায় মহিমান্বিতে বছর ঘুরে ফের ঈদুল আযহা আমাদের মাঝে ফিরে এসেছে। স্বার্থপরতা পরিহার করে মানবতার কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করা কোরবানির শিক্ষা। হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-ক্রোধকে পরিহার করে সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় আত্মনিবেদিত হওয়া আমাদের কর্তব্য। পশু কোরবানির পাশাপাশি দুর করতে হবে আমাদের মনের পশু।
মুসলিম জাতির সবচেয়ে ধর্মীয় বড় উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। তারমধ্য অন্যতম ঈদুল আযহা (কোরবানি ঈদ)। ঈদ শুধু আনন্দই দেয় না, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ও অনৈক্য ভুলে গিয়ে পরস্পরকে ভ্রাতৃত্ব, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে বন্ধনে আবদ্ধ করে সামাজিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করে। ঈদ আমাদের ব্যক্তিগত, সামাজিক ঐক্যের বন্ধন শক্তিশালী করে। পবিত্র ঈদুল আযহার মহান আদর্শ ও শিক্ষা কে আমাদের চিন্তা ও কর্মে প্রতিফলন করতে হবে।
প্রায় ৪ হাজার বছর আগে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের আশায় হযরত ইব্রাহিম (আ.) তার ছেলে ইসমাইলকে (আ.) কোরবানি করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু পরম করুণাময়ের অপার মহিমায় ইসমাইলের (আ.) পরিবর্তে একটি ভেড়া বা দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। সেই ত্যাগের মহিমায় মুসলিম সম্প্রদায় জিলহজ মাসের ১০ তারিখে আল্লাহর অনুগ্রহ প্রাপ্তির আশায় পশু কোরবানি করে থাকে। তবে ঈদের পরও ৩ দিন অর্থাৎ ১১ ও ১২ জিলহজ্ব পশু কোরবানি করার ধর্মীয় বিধান রয়েছে।
বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে অদৃশ্য করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবায় বিপর্যস্ত গোটা বিশ্ব। করোনায় বিশ্বে কোটি কোটি মানুষ আক্রান্ত ও লাখ লাখ নানা শ্রেণির মানুষ মৃত্যু বরণ করেছেন। তবুও আমাদের জীবন-জীবিকার তাগিদে অনেক কিছুই বিসর্জন দিতে হয়েছে। প্রায় ১৮ মাসেও বেশি সময় ধরে এই অদৃশ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে চলছি আমরা।
করোনার সংক্রমণরোধে আমরা সরকারের নির্দেশনা- স্বাস্থ্যবিধি-সামাজিক দুরত্ব মেনে চলব, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার ও মাস্ক পরিধান করুন। করোনা আক্রান্ত সকল মানুষের নিরাময় কামনা করে তিনি বলেন, ‘পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে এবারের কোরবানির ঈদ উদযাপন করুন।
শত দূর্যোগের মাঝেও পবিত্র ঈদ-উল ফিতর সকলের জীবনে বয়ে আনুক সুখ-সমৃদ্ধি, ও শান্তির বারতা। আসুন, আমরা রমজানের শিক্ষা সবার জীবনের পাথেয় করে বিশ্বে সাম্যের জয়গান গাই। পবিত্র ঈদকে সামনে রেখে সকল বৈষম্য, অসঙ্গতি, সামাজিক অস্থিরতা ও অসুস্থতা থেকে মুক্তি পেতে নারী ও শিশু নির্যাতনসহ মাদক, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় সক্রিয় হই । আমরা শান্তিময় একটি সমাজ প্রতিষ্ঠায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করি।
কোরবানি পশু বর্জ্য নিষ্কাশনে আমাদের সকলের যা কতব্য । ঈদুল আযহার শিক্ষা বাস্তব জীবনে বাস্তবায়ন এবং বিশ্বব্যাপী করোনায় বিপর্যস্ততা সাড়িয়ে সকলকে যেন মহান আল্লাহ হেফাজত রাখেন। তাই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বা পাড়া-মহল্লায় কোরবানির পশুর সকল বর্জ্য দ্রুত অপসারণ করাসহ পরিচ্ছন্নকর্মীদের সহযোগিতা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য বলে মনে করছি। পরিশেষে ঈদ-উল-আযহা সবার জীবনে নিয়ে আসুক সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি, সমাজে সৃষ্টি হোক সম্প্রীতির বন্ধন, মহান আল্লাহ তা’লার দরবারে এ প্রার্থনা। ঈদ মোবারক।
সম্পাদক
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...