সোমবার, ০৫ জুন ২০২৩, ১০:০৬ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
বিদ্যুতের লোকচুরি খেলায় জনজীবন অতিষ্ট বন্দরে রোগাক্রান্ত গবাদি পশু অবাধে জবাই নাঃগঞ্জ ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের উন্মুক্ত বাজেট ঘোষণা নারায়ণগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর “জুলিও কুরি” শান্তিপদক প্রাপ্তি উপলক্ষ্যে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি নারায়ণগঞ্জে ভূমি সেবা সপ্তাহের উদ্বোধন ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদে নতুন সচিব আবু সাঈদ’র যোগদান নারায়ণগঞ্জে ইপিআই অনলাইন মাইক্রোপ্লান প্রশিক্ষণশালার উদ্বোধন ফতুল্লায় হাজি জসিম কন্ট্রাক্টরের উদ্যোগে ৪শ’ পরিবারের মাঝে ঈদ উপহার বন্দর উপজেলা প্রেসক্লাবের উদ্যোগে ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত না.গঞ্জ সদরে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন নির্মাণ শীর্ষক মতবিনিময় কর্মশালা

মেয়রের ভাই যুবলীগ নেতা উজ্জলের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা: এবার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর ছোট ভাইয়ের বিরুদ্ধে জমি দখল করে বাড়ি গুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবীর জমি দখল ও বসতবাড়ী ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়ার ওই কাজে নারায়ণগঞ্জে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা ও ভেকুর সহযোগিতা নেয়া হয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান। আর কর্মকর্তা বলেছেন, মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর নির্দেশে আসছেন। মেয়র আইভীর আপন ছোটভাই আলী রেজা উজ্জল নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক।

তবে, দখলের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন আলী রেজা উজ্জল। তার দাবি, ‘আমাদের জমি আমরা নিয়ে নিছি’।

বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) সকাল থেকে সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী মোস্তাক আহমেদের টিনশেড বাড়ী গুড়িয়ে দেয়া হয়। সিটি কর্পোরেশনের সার্ভেয়ার কালাম মোল্লার উপস্থিতিতে কর্পোরেশনের ভেকু ব্যবহারকালে যুবলীগ নেতার সাথে দেড় শতাধিক ক্যাডার বাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলো বলে আইনজীবী মোস্তাক আহমেদ দাবি করেন। এছাড়াও ফতুল্লা থানা পুলিশকে খবর দিয়ে এনেও কোন সহযোগীতা পায়নি বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ওই আইনজীবী।

এদিকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি ইস্যুতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত সেবা প্রদানকারী সংস্থা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের বেকু গাড়ি ও কর্মকর্তাদের ব্যবহার করা যায় কিনা, এমন প্রশ্নে সিটি করপোরেশনের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. কামরুল আহসান জানান, ‘বেকু সিটি করপোরেশন থেকে ভাড়া নেওয়া যায়। তাই বেকু কিভাবে গিয়েছে, সেটা আমি বলতে পারবো না। তবে, কালাম মোল্লা সিটি করর্পোরেশনের বেতন ভুক্ত সার্ভেয়ার। সিটি করপোরেশনের কোন উচ্ছেদ হলে আমাদের পক্ষ থেকে সার্ভেয়ার হিসেবে সে যায়। কিন্তু মেয়র বা তার ভাইয়ের ব্যক্তিগত জমিতে কেন তিনি গেলেন বা কার নির্দেশে গিয়েছে, সেটা প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা বলতে পারবেন।

আর এ বিষয়ে প্রধান নির্বাহীর সাথে একাধীক বার মোবাইল ফোনে চেষ্টা করেও কল রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

সিটি করপোরেশনের সার্ভেয়ার কালাম মোল্লা জানান, ‘মেয়রের অর্ডারে এখানে এসেছি’।

অপর দিকে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এই জায়গাতো আমার না। আমার ভাইদের-আমার বাবার’। ব্যাক্তি মালিকানাধিন জমি দখলে সিটি কর্পোরেশন যেতে পারে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ‘এক বছর ধরে তাদের বলা হচ্ছে জায়গাটি ছেড়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু তারা ছাড়েনি’। মেয়র পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আপনাদের বিচার করতে পারলে মহল্লার বিচার করতে পারবো না কেন’? পরে তিনি স্বীকার করেন যে, সিটি কর্পোরেশনের সার্ভেয়ার তিনিই পাঠিয়েছেন।

ঢাকা সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী মোস্তাক আহমেদ জানান, ৮২ বছর আগে সমশের আলী নামের দাগের ৪৩ শতাংশ সম্পত্তি থেকে পৌনে ২২ শতাংশ ক্রয় করেন আমার দাদা। বাকী জামি ক্রয় করেন মেয়র আইভীর বাবা আলী আহাম্মদ চুনকা। ১৯৭৫ সালে মাপঝোপ করে তাদের জায়গা বুঝে নিয়ে চুনকা সাহেব নকশায় স্বাক্ষর করে দেয়াল নির্মাণ করেন। সম্প্রতি চুনকার ছেলে ও মেয়র আইভীর ভাই আলী রেজা উজ্জল আমাদের বসতবাড়ীতে জমি পাবে বলে দাবি করে আসছে। ২৪ জুন বেলা পৌনে ১১টার দিকে মেয়র আইভীর ভাই আলী রেজা উজ্জলের নেতৃত্বে দেড় শতাধিক ক্যাডার বাহিনী আমাদের বাড়ীতে আসে। সঙ্গে সিটি কর্পোরেশনের ভেকু ও উচ্ছেদ কর্মী নিয়ে আসেন কর্পোরেশনের সার্ভেয়ার কালাম মোল্লা। কোনকিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা ভেকু দিয়ে আমাদের বসতঘর ভাঙ্গা শুরু করে। আমি মোবাইল ফোনে ভিডিও করতে গেলে যুবলীগ নেতা উজ্জল আমার হাত থেকে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় এবং আমাকে মেরে ফেলার হুমকী দেয়। পরে বাসার ফোন দিয়ে আমি ফতুল্লা থানা পুলিশকে বিষয়টি জানালে তারা ঘটনাস্থলে আসে। তখন উজ্জল ওই পুলিশদের মেয়র আইভীর সাথে কথা বলিয়ে দিলে তারা (পুলিশ) চলে যায়।

ঘটনাস্থালে উপস্থিত থাকা আইনজীবী সুমন মিয়া বলেন, জমি নিয়ে ফৌজদারি অপরাধের আশঙ্কা দেখা দিলে ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী প্রতিকার চাওয়ার সুযোগ রয়েছে। অথচ, আইনের আশ্রয় না নিয়ে উল্টো জবর দখলের পথ বেছে নেওয়াটা আলী রেজা উজ্জলের জন্য উচিত হয়নি।

ভুক্তভোগীর মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে দখলের সময় ঘটনাস্থলে যাওয়া পুলিশ সদস্য ফতুল্লা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কামাল জানান, থানা থেকে মারামারির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। আমরা যাওয়ার পূর্বেই বাড়ি ঘর গুলো ভাঙ্গা দেখতে পেয়েছি। পরবর্তীতে এলাকা ভিত্তিক ভাবে মিমাংসার পরামর্শ দিয়ে ওসি সাহেবকে জানিয়ে চলে আসছি।

তবে, ফতুল্লা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রাকিবুজ্জামান অস্বীকার করে বলেন, এমন কোন ঘটনা আমার জানা নেই।

সকল অভিযোগ অস্বীকার করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী রেজা উজ্জল জানান, ‘জমিটি আমাদেরই ছিলো। এক মাস আগে এই জমি মাপা হইছে। তখন আমাদের, ওদের এবং সিটি করপোরেশনের সার্ভেয়ার ছিলো। গত এক ধইরা আমাদের ওরা ঘুরাচ্ছে। বার বার ওদের বলার পরও বসতেছে না, আসতেছে, মানতেছে না। তাই, আমরা আমাদের জায়গা বুঝে নিছি।

নিউজটি শেয়ার করুন...

আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...


© All rights reserved © 2020 bdnewseye.com
Developed BY M HOST BD