নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সোলাইমান নামে এক যুবককে প্রকাশ্যে ইট দিয়ে মাথা থেতলে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এসময় মসজিদের মাইকে ডাকাত আতংক ছড়িয়ে লোক জড়ো করা হয়। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে দ্বন্ধের জেরে এই হত্যাকান্ড বলে দাবি পরিবারের। প্রকাশ্যে এমন হত্যাকান্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। মঙ্গলবার উপজেলার তারাব পৌরসভার গন্ধর্বপুর নামাপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত সোলাইমান(৩০) উপজেলা পরিষদ চত্বর এলাকার মজিদ শিকদারের ছেলে।
তার ঘনিষ্ট সহযোগী মাছিমপুর এলাকার মোহাম্মদ আলী জানান, মুড়াপাড়াসহ আশপাশের এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মুড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোফায়েল আহাম্মেদ আলমাছসহ তার সমর্থকদের সঙ্গে যুবলীগের সমর্থক নিহত সোলাইমানসহ তার লোকজনের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিলো। প্রায় সময়ই উভয় গ্রুপের মাছিমপুর, মীরকুটিরছেও, নার্সিংগেলসহ বিভিন্ন স্থানে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, হামলা, ভাংচুর ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে আসছে। সর্বশেষ গত ২৮ মে মাছিমপুর এলাকায় চেয়ারম্যান সমর্থকদের সঙ্গে সোলায়মানসহ তার লোকজনের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও বাড়ী ঘরে হামলার ঘটনা ঘটে। এসময় বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষনের ঘটনা ঘটে। সে ঘটনায় চেয়ারম্যান আলমাছ বাদী হয়ে নিহত সোলাইমানসহ ২৫ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন।
এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে মুড়াপাড়া নার্সিংগেল এলাকায় সোলায়মান তার মাছের খামারে খাবার দিচ্ছিলেন। তখন তাকে কে বা কারা তাকে ডেকে পাশ্ববর্তী গর্ন্ধবপুর নামাপাড়া এলাকায় নিয়ে আসেন। সেখানে অজ্ঞাত লোকজন তাকে নামাপাড়া বালুর মাঠে এলোপাথারী কোপানো শুরু করলে লোকজন দেখতে পেয়ে মসজিদের মাইকে ডাকাত ডাকাত বলে ঘোষনা দিতে থাকেন। গ্রামবাসী লোঠিসোটা নিয়ে এগিয়ে এসে দেখতে পায় সোলাইমানের লাশ সেখানে পরে রয়েছে। তাকে ইট দিয়ে থেতলে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পরে দুপুর আড়াইটার দিকে তার আত্মীয় স্বজনরা সেখান থেকে তাকে উদ্ধার পরে প্রথমে রূপগঞ্জের একটি হাসপাতালে পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেছে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন।
নিহত সোলাইমানের ছোট ভাই রাজিব মিয়া জানান, চেয়ারম্যান আলমাছের সাথে তার ভাইয়ের দির্ঘদিনের দ্বন্ধ চলছিলো। গত ৩ দিন আগেও চেয়ারম্যান সোলাইমানের নামে মামলা করেছে। এ পর্যন্ত চেয়ারম্যান ও তার সমর্থকরা সোলাইমানের নামে অন্তত ১২টি মামলা দায়ের করে তাকে সন্ত্রাসী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছেন।চেয়ারম্যানের নির্দেশে তার লোকজনই তার ভাইকে হত্যা করেছে বলে দাবি রাজিবের। রাজিব আরো অভিযোগ করে বলেন, যখন তার ভাইকে হত্যা করা হচ্ছিল। তখন চেয়ারম্যান আলমাছ নিজেকে নির্দোষ সাজাতে থানায় গিয়ে বসে ছিল। এতেই প্রমান হয় এর পিছনে আলমাছের হাত রয়েছে।
এদিকে, এ হত্যাকান্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে চরম আতঙ্কে ঘটনাস্থলসহ আশপাশের এলাকার মানুষ ঘরে তালা ঝুলিয়ে অন্যত্র চলে যায়। হত্যাকান্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে কোন সময় বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে জানতে মুড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোফায়েল আহাম্মেদ আলমাছের মুঠোফোনে বার বার তার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কলটি গ্রহন করেননি।
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদ বলেন, নিহত ব্যক্তির নামে একাধিক মামলা আছে। কারা কি কারনে তাকে হত্যা করলো সে বিষয়ে আমরা এখন পর্যন্ত কোন তথ্য প্রমান পাইনি। তদন্তে যাদের নামই উঠে আসবে তারা কেউ ছাড় পাবে না। লাশ বর্তমানে ঢাকা মেডিকেলে রয়েছে। ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি। তবে আমরা থানা পুলিশের পক্ষ থেকে তদন্তকাজ শুরু করে দিয়েছি।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...