নিজস্ব সংবাদাতা: নারী দিয়ে ফাঁদ পেতে নগ্ন দৃশ্য ধারন করে ব্ল্যাক মেইলিং গ্রুপের মূল হোতা জনি গ্রেফতার হলেও এখনো ধরা ছোয়ার বাইরে রয়ে গেছে তার অন্যতম দুই সেনাপতি তোফাজ্জল ওরফে মেজর ওরফে তুজু ডাকাত ও আলম ওরফে মাইচ্ছা আলম।
শুধু মাত্র নারী দিয়ে ব্ল্যাক মেইলিংই নয় মাদক ব্যবসা,অটোরিক্সা চুরি,ছিনতাই সহ সমাজ বিরোধী নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডের জন্ম দিয়ে স্থানীয় মহলজুড়ে কায়েম করেছে ত্রাসের রাম-রাজত্ব।ফলে ভুক্তভোগী,নির্যাতিতরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েও টু শব্দটি করার সাহস পর্যন্ত কেউ করেনা।
ধূরন্দর এই চক্র এতোটাই ভয়ংকর যে তাদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় বিগত কয়েক বছর পূর্বে তাদের লালিত নারী দিয়ে স্থানীয় ঐ দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ধর্ষনের মামলা দায়ের করায়।ফলে সাধারন মানুষ যেমন তাদের বিরুদ্ধে টু শব্দটি করার সাহস করেনা তেমনি স্থানীয় গণ মাধ্যম কর্মীরাও তাদের বিরুদ্ধে সংবাদ লিখতে ভয় পায়।ফলে বরাবরই রয়ে গেছে এ চক্রটি আলোচনা- সমালোচনার বাইরে।
জানা যায়,পিলকুনী এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে নারী দিয়ে ফাঁদ পেতে জনি,তুজু ডাকাত ও মাইচ্ছা আলমের নেতৃত্বে স্থানীয় একটি চক্র বিভিন্ন ব্যবসায়ী সহ নানা শ্রেণীর অর্থশালী পেশাজীবীদের টার্গেট করে ব্ল্যাক মেইলিংয়ের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা।শুধু তাই নয় এ চক্রটি কালো গ্লাসযুক্ত মাইক্রোবাস,প্রাইভেটকার নিয়ে ঢাকা- নারায়নগঞ্জ মহা-সড়ক, নতুন স্টেডিয়াম -নন্দলালপুর সড়কে চলাচলকারী পথচারীদের রাতের অন্ধকারে জোড় পূর্বক গাড়ীতে তুলে নিজেদের কে ডিবি পরিচয় দিয়ে সর্বস্ব লুটে নেয় তারা।এছাড়া মাদক ব্যবসাও অটোরিক্সা চুরি- ছিনতাইয়ের সাথেও চক্রটি জড়িত রয়েছ বলে স্থানীয়রা জানায়।
তথ্য মতে,মাইচ্ছা আলম নেতৃ্ত্বে প্রতিরাতেই পিলকুনী ব্যাংক কলোনী এলাকাতে বসে জুয়ার আসর।ইতিমধ্যে পুলিশ জুয়ার আসরে হানা দিয়ে ত্রি-রত্ন চক্রের অন্যতম সদস্য তুজু ডাকাত সহ বেশ কয়েকজন জুয়াড়ী কে জুয়ার আসর থেকে গ্রেফতার করে। বেশ কয়েক মাস পূর্বে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাবেক ইউপি সদস্য আমজাদ হোসেন এবং তার ছোট ভাই ইকবাল হোসেন মোল্লা কে মাইচ্ছা আলমের নির্দেশে তাদের লালিত কিশোর গ্যাং সদস্যরা বেদম প্রহার করে। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ হলেও নির্যাতিতরা সঠিক বিচার পায়নি।
মুসুল্লি বেশি তোফাজ্জল ওরফে মেজর ওরফে তুজু ডাকাত দেখতে পহেজগার মনে হলেও সে একজন ভয়ংকর ধরনের অস্ত্রধারী পেশাদার অপরাধী।সামান্য ঘটনা কে কেন্দ্র করে সে প্রায় সময় জনসম্মুখে আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করে থাকে।তাই ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস করেনা।জনির ডান হাত বলে পরিচিত তুজু ডাকাত গত এক দশকে একাধিকবার ফতুল্লা থানা পুলিশের হাতে আটক হলেও সরকারদলীয় স্থানীয় এক আওয়ামীলীগ নেতাও বিশেষ পেশার এক ব্যক্তির বদৌলতে প্রতিবারই সে থানা হাজত থেকে বেরিয়ে আসে।সর্বশেষ গত বছর অটেরিক্সা চুরির অভিযোগে থানা পুলিশ তাকে আটক করলে সরকারদলীয় নেতা ও বিশেষ পেশার সেই ব্যক্তি তাকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।ফলে তুজু ডাকাতের বিরুদ্ধে থানায় কেউ সাহস করে অভিযোগ দায়ের করলেও তা মামলাতে রেকর্ড হয়নি কখনো।
সালাউদ্দিন শেখ মোঃ জনি ফতুল্লার ব্যংক কলোনী,পিলকুনি,হিন্দু পাড়ার সমাজ বিরোধী সকল অপকর্মের হোতা।তার বিরুদ্ধে নিজ বাড়ীতে বসে মাদক ব্যবসা,নারী দিয়ে ফাঁদ তৈরী করে ব্ল্যাক মেইলিং,চাঁদবাজী,সন্ত্রাসী লালন- পালন সহ ন সমাজ বিরোধী নানা অপরাধের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।অপরাধ সেক্টর নিয়ন্ত্রণে জনির রয়েছে এক শ্রেনীর উঠতি বয়সী মাদকাসক্ত সন্ত্রাসী বাহিনী।জনির হুকুম পেলেই তা তামিল করতে ব্যস্ত হয়ে পরেন এই সন্ত্রাসী বাহিনী।যখন-তখন যে কাউকে বাসা বা রাস্তা থেকে তুলে এনে জনির বাড়ীর ভিতরে এনে চালায় নির্যাতনের স্টিম রোলার।কাকে ধরবে,কার নিকট থেকে অর্থ আদায় করবে এ সব কিছুর পরিকল্পনার মাস্টার মাইন্ড হলো আলম ওরফে মাইচ্ছা আলম।
স্থানীয়বাসীদের মতে,জনি বাহিনী প্রধান হলেও সে মূলত মাইচ্ছা আলম ও তুজু ডাকাতের উপরই অনপকটা নির্ভরশীল।তথ্য মতে মাইচ্ছা আলমের হাত ধরেই ফতুল্লার ব্যাংক কলোনী,পিলকুনী এলাকাতে নারী দিয়ে ফাঁদ পেতে ব্ল্যাক মেইলিংয়ের মতো অপরাধের আবির্ভাব হয়।শুরুতে জনির বড় ভাই হিটলার ব্ল্যাক মেইলিং গ্রুপের প্রধানের ভুমিকায় থাকলেও আভ্যন্তরীন কোন্দলের পাশাপাশি প্রশাসনের চাপের মুখে হিটলার সরে যায়।
পরবর্তীতে জনি ব্ল্যাক মেইলিং গ্রুপের দ্বায়িত্ব গ্রহণ করে।তার বাসায় রয়েছে বিশেষ কায়দায় লুকানো সিসি ক্যামেরা।২০১৮ সালে নারায়নগঞ্জ জেলার তৎকালীন পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান জনিদের বাড়ীতে অভিযান চালিয়ে সিসি ক্যামেরা উদ্ধার সহ জনি কে আটক করে।সর্বশেষ জনি এক কিশোরী কে ধর্ষনের অভিযোগে ফতুল্লা থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়।সেই মামলায় দুই বছরের ও অধিক সময় জেলা কারাগারে আটক থাকার পর গত কয়েক মাস পূর্বে জামিনে বেরিয়ে আসে।জামিনে বেরিয়ে এসে তার প্রধান দুই সেনাপতিকে নিয়ে আবারো জড়িয়ে পরে মাদক ব্যবসা,নারী ব্ল্যাক মেইলিং,অটোরিক্সা চুরি,ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাই সহ সমাজ বিরোধী নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে।
গত মাসের ২৩ তারিখে নাঈম মোঃ রাফি নামক এক শিক্ষক কে বাসায় ডেকে এনে নারী দিয়ে ফাঁদ পেতে অবৈধ মেলামেশার দৃশ্য ধারন করে তার নিকট থেকে পাচ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে। এ ঘটনায় ঐ শিক্ষক ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে একদিন পর র্যাব-১১’র নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করে।পরে র্যাব-১১’র সদস্যরা ঘটনার সত্যতা পেয়ে বৃহস্পতিবার (১ জুন) রাতে ফতুল্লা থানার পিলকুনিস্থ ফাতেমা আবাসন নামক দোতালা ভবনের দ্বিতীয় তলায় অভিযান চালিয়ে জনি কে আটক করে।এ সময় তার নিকট থেকে ধারন করা ভিডিও সহ ভিডিও ধারন করার কাজে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন উদ্ধার করে।
স্থানীয়বাসী জনির অন্যতম দুই সেনাপতি তুজু ডাকাত ও মাইচ্ছা আলম কে গ্রেফতারের ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...