দুরন্ত কৈশোর
মনে আছে বনি,কৈশোরের সেই মজার খেলার কথা?
আমি মিছামিছি ক্যামেরাম্যান আর তুই আমার সহকারী।
মনে আছো,আমরা নতুন নতুন আইডিয়া দিয়ে কত জনকে বোকা বানাতাম?
তারছিড়া সীমা,ধস্যি সোমা,বুদ্দু রাজু,পাকনা বাতেন,চালাক নান্নু এরাই ছিল আমাদের বলির পাঠা।
এদের কোনো না কোনো ভাবে বোকা বানিয়ে কি যে মজা পেতাম!
ওরা যে বদলা নিতে চাইতো না তাতো নয়,
কিন্তু পেরে উঠত না আমাদের সাথে।
মনে আছে তোর,চালাক নান্নু যেদিন বলির পাঠা হলো সেদিনের কথা?
নান্নুকে বললাম,আমি তোর ছবি তুলবো
প্রথমে রাজি হলো না,একসময়
কথার প্যাচে পড়ে রাজি হয়ে গেলো।
আমি বললাম,এই চেয়ারটায় বসে থাকবি যখন আমি রেডি বলবো উঠে দাঁড়াবি
আবার যখন সিট বলবো অমনি সাথে সাথে বসে পড়বি।
বসে পড়লেই তোর ঝকঝকে সুন্দর একটা ছবি উঠে আসবে।
নান্নুর চোখেমুখে কি বিপুল বিস্ময়!
আমার চোখের গোপন ইশারায় তুই নান্নুর পেছন থেকে আস্তে করে চেয়ারটি সরিয়ে নিলি।
আমি যখনই সিট বললাম নান্নু সাথে সাথে বসতে গিয়ে ধপাস করে পা উল্টে পড়ে গেল!
বয়ে গেল হাসির বন্যা
শুরু হলো নান্নুর কান্না,
অতিচালাকের গলায় দড়ি
নান্নু নিলো জম্মের আড়ি।
একসময় তুইও হলি বলির পাঠা
তোর পাংশু মুখটা দেখে আমার সেকি হাসি!
আমার হাসি দেখে তোর হলো অভিমান।
চলে গেলি তুই আমায় ছেড়ে আমাকে বলির পাঠা বানিয়ে!
ছেড়ে দিলাম মজার খেলা জনমের মতো।
বুঝলাম নিছক আনন্দের জন্য অন্যের চোখের
জল ঝরানো বেদনার।
সবাই ছেড়ে চলে গেলেও ক্যামেরা আমাকে ছেড়ে যায়নি,আসলে আমিই ছাড়তে পারিনি।
এখন আমি সত্যিকারের ক্যামেরাম্যান
কতশত ছবি তুলি রোজ।
কি বলতো,সেই মিছামিছি ক্যামেরাম্যানের সহকারীকে আজও ভুলতে পারিনি।
যখনই ছবি তুলি তুই থাকিস ছায়ার মতো আমার সাথে।
ভীষণভাবে অনুভব করি তোকে
কোথায় হারিয়ে গেলিরে বনি,
দুরন্ত কৈশোরের মতো?
ভয়
মাঝ রাতে ঘুম ভাঙ্গে
আত্মচিৎকার শুনে
অমাবস্যার অন্ধকারে
ভয় লাগে মনে।
পরিবেশটা গা-ছমছমে
কাটা দিলো গায়
কে যেন কড়মড়িয়ে
হাড্ডি চাবিয়ে খায়।
ঝিঁঝিঁপোকার ঝিঁঝিঁ ডাক
লাগে না মোটেই ভালো
ঘোর আঁধারে জোনাকিরা
জ্বালিয়ে যায় আলো।
গাছের ডালে পেঁচা ডাকে
চিৎকার বুনো হাঁসের
পাশ দিয়ে যায় কালো ছায়া
নয়তো মানুষের।
বিকট এক গোঙানির হাসি
চমকে উঠে পিলে
মনে হচ্ছে মানুষের মুন্ডু
খাচ্ছে কেউ গিলে।
মাথার উপর ডানা ঝাপটা
উড়ে গেল বাদুড়
বিরাট এক কালো বিড়াল
দাঁড়িয়ে আছে অদূর।
ভয়ে একেবারে জড়োসড়ো
শুনে নিঃশ্বাসের শব্দ
পড়তে থাকি দোয়া-দরুদ
না হতে জব্দ।
ঝুমুর ঝুমর নুপুর পায়
কে যেন হেটে যায়
চকিতে পেছনে তাকাই
হাওয়ায় গাছ দোল খায়।
মনে পড়ে ক্ষুধিতপাষাণ
আর শ্রীকান্তের কথা
শ্মশানে নেই ভাঙ্গা প্রাসাদেও না
তবু মনে হয় আছি সেথা।
শুনতে পেলাম ফিসফিসিয়ে
কথা বলছে কারা
এদিক খুঁজি ওদিক খুঁজি
হয়ে দিশেহারা।
হঠাৎ দেখি গাছের ডালে
হাসে ব্যাঙ্গামা-ব্যাঙ্গামী
ওদের নানান কান্ড দেখে
ভয়ে মরি আমি।
বাকীরাত শুনি ওদের
রূপকথার যত গল্প
ভোর হতেই ভয় আমার
কাটতে থাকে অল্প অল্প।
বৃষ্টি বন্দনা
বৃষ্টি তুমি এসো,
প্রচন্ড খরায় ফেটে চৌচির হওয়া জমিনে,
সমৃদ্ধ ফসল হয়ে,
এসো জন্মান্ধো জমিনে লাঙ্গলের ফলা হয়ে।
কৃষাণীর আল্লাহ মেঘদে পানিদে বলে মাগন মাগার দিনে,
কৃষকের লুকায়িত হাসি হয়ে।
বৃষ্টি তুমি এসো,
তোমার অপেক্ষায় গায়েবী নামাজের দিনে।
এসো পাতাঝরা হলুদ বনানীতে
সবুজের সমারোহ হয়ে।
অঝোর ধারায় ঝরো মাঠ-ঘাট প্রান্তরে
শীতল হউক মরুর অগ্নিবলয়, শুচি হউক ধরা।
বৃষ্টি তুমি ঝমঝমিয়ে নামো,
গাছের ডালে,টিনের চালে,
তোমার টুপটাপ শব্দের শিহরণে
আবেগ জাগাক মনে।
বৃষ্টি তুমি এসো,
গ্রামে-গঞ্জে,নগরে-বন্দরে নির্মল করো জরা, করোনার মত যত মহামারী আবর্জনা।
এসো আমার শহরে,
তোমার অপেক্ষায় উর্ধ্বপানে চেয়ে আছে
এই ধূসর শহরের তৃষ্ণার্ত মানুষেরা।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...