শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৯:২৮ অপরাহ্ন
বিডি নিউজ আই ডেস্ক: ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দীর্ঘ প্রায় অর্ধশত বছরেরও অধিক সময় পর ইউরোপীয় শিরোপা জয় করল ইতালী। টাইব্রেকারে স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে হারিয়ে শিরোপা জয় করে ইতালী। এই নিয়ে দ্বিতীয় বারের মত ইউরোপীয় শিরোপা জয় করল আজ্জুরিরা।
গতকাল রোববার লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে টাইব্রেকারে ৩-২ গোলে স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে পরাজিত করেছে ইতালী। নির্ধারিত সময়ের ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হওয়ায় অতিরিক্ত সময়ে গড়ায় ম্যাচ। সেখানেও কোন দল আর গোল করতে না পারায় টাইব্রেকারের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয় জয় পরাজয়। ফলে ১৯৬৬ সালের বিশ^কাপ শিরোপা জয়ের পর প্রথম বড় কোন শিরোপা জয়ের যে স্বপ্ন ইংল্যান্ড সমর্থকরা দেখছিল সেটি দু:স্বপ্নে পরিণত হয়েছে।
টাইব্রেকারে ইংল্যান্ড স্কোয়াডের ১৯ বছর বয়সি তরুণ তারকা বুকায়ো শাকার জয় পরাজয় নির্ধারনি শটের বলটি বাঁ প্রান্ত দিয়ে ডাইভ দিয়ে রুখে দেন ইতালীয় গোল রক্ষক জিয়ানলুইজি ডোনারুমা। এতেই টাইব্রেকারে টানা তিন শটে ব্যর্থতা নিশ্চিত হয়ে যায় ইংলিশ দলের। এর আগে পেনাল্টি থেকে গোল করতে ব্যর্থ হন পেনাল্টি বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত মার্কাস রাসফোর্ড ও জাদন সানচো।
ফলে গত বিশ^কাপের মুল আসরে খেলতে না পারা ইতালীয়রা চার বছরেরও কম সময়ের ব্যবধানে জয় করে নেয় ইউরোপীয় শিরোপা। ছয় দশকের মধ্যে ওইবারই প্রথম বিশ^কাপের চুড়ান্ত আসরে খেলার যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছিল ইতালী। এখন রেকর্ড ৩৪ ম্যাচে অপরাজিত থাকার রেকর্ড গড়া দলটিই ইউরোপের সেরা দল। আর বরার্তো মানচিনি হচ্ছেন তাদের কোচ, যিনি প্রথম দফা দায়িত্ব নিয়েই আন্তর্জাতিক শিরোপা জয় করেছেন। এর আগে ১৯৬৮ সালে ইউরোপীয় টুর্নামেন্টে প্রথম শিরোপা জয় করেছিল ইতালী। যদিও চারবার বিশ^কাপের শিরোপা জয় করেছে তারা।
ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ শুরুর আগে থেকেই ইংলিশরা শুরু করেছিল সেই বিখ্যাত গান ‘ইটস কামিং হোম’। ইংল্যান্ড ফাইনালে ওঠায় ভক্তরা ভেবেছিল হয়তো স্বপ্ন এবার পূরণ হতে যাচ্ছে। অবসান হতে যাচ্ছে ৫৫ বছরের অপেক্ষার প্রহর। কিন্তু সেটা আর হলো না, ইংলিশদের দু:স্বপ্নে ভাসিয়ে ইউরোর ট্রফি কেড়ে নিল ইতালি।
টানা টান উত্তেজনায় ওয়েম্বলিতে ম্যাচের শুরুতেই লিড পেয়ে যায় স্বাগতিক ইংল্যান্ড। দুর্দান্ত প্রতি আক্রমন থেকে ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই গোল করে এগিয়ে যায় স্বাগতিকেরা। ইতালীয়দের কর্নার থেকে ভেসে আসা বল ক্লিয়ার করে লম্বা পাস দেন কিয়েরান ট্রিপিয়ার। সেখান থেকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসা লুক শ ডান পায়ের দুর্দান্ত এক শট নেন। তাতে বল জড়িয়ে যায় ইতালির জালে। সঙ্গে সঙ্গে উৎসবে মেতে ওঠে ইংলিশরা।
ওই গোলটি করে রেকর্ড বইয়েও নাম লিখিয়ে নেন লুক শ। আন্তর্জাতিক ফুটবলে এটাই ছিল তাঁর প্রথম গোল। আর গোল করেই গড়ে লুক গড়লেন ইতিহাস। ম্যাচের এক মিনিট ৫৭ সেকেন্ডের মাথায় তাঁর গোলটিই এখন ইউরোর ফাইনালে করা সবচেয়ে দ্রুততম গোল। এর আগে ১৯৬৪ সালে পেরেদা ৬ মিনিটের মাথায় গোল করেছিলেন।
পিছিয়ে পড়া ইতালি প্রথম সুযোগ পায় অষ্টম মিনিটে। ইংল্যান্ডের পোস্টে শট নেন ইনসাইন। কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে সেই যাত্রায় রক্ষা পায় ইংলিশরা।
এরপর বেশ কয়েকবার আক্রমণে যায় ইতালি। প্রথমার্ধের ৬১ ভাগ বল দখলে রেখেও স্বাগতিক রক্ষণ ভাঙতে পারেনি ইতালী। আর ওই অর্ধে মাত্র ৩৯ মিনিট বল নিয়ন্ত্রনে রেখেছে ইংল্যান্ড।
বিরতি থেকে ফিরে ৪৮ মিনিটে হ্যারি কেইনকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন ইতালির বারেলা। ৫৩ মিনিটের মাথায় আক্রমণে যায় ইতালি। কিন্তু ইনসাইনের শট লক্ষ্যভ্রস্ট হয়। দুই মিনিট পর রাহিম স্টার্লিংকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন বোনুচ্চি। ৫৭ মিনিটের মাথায় ইনসাইন ফের শট নেন ইংল্যান্ডের পোস্ট লক্ষ্য করে। তাঁর আক্রমণ ঠেকিয়ে দেন পিকফোর্ড।
এরপর ইংলিশদের উপর চড়াও হয়ে মুহর্মূহ আক্রমন রচনা করতে থাকে ইতালী। অপরদিকে ইংলিশরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে সফরকারীদের প্রতিহত করার কাজে। এ সময় অতিমাত্রায় রক্ষনাত্মক কৌশলে চলে আসে ইংল্যান্ড। আর এর মাসুল হিসেবে হজম করতে হয় গোল। ম্যাচের ৬৭ মিনিটে ইংলিশ ডি বক্সে জটলার মধ্যে থেকে গোল করে ইতালিকে সমতায় ফেরান বনুচ্চি।
এরপর নির্ধারিত ৯০ মিনিটে কেউই আর জালের দেখা পায়নি। নির্ধারিত সময় ১-১ গোলের সমতা হলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। অতিরিক্ত সময়ের দুই অর্ধেও মেলেনি ফল। শেষ পর্যন্ত ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। পেনাল্টি শুট আউটেই ঠিক হয় এবারের ইউরো চ্যাম্পিয়ন।
ম্যাচ শেষে শিষ্যদের সঙ্গে শিরোপা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন কোচ মানচিনিও। এ সময় অধিনায়ক জিওর্জিও চিলিয়ানি শিরোপা উচিয়ে ধরেন। আর শিষ্যদের সঙ্গে বিজয় আনন্দে যুক্ত হন তিনি।
মানচিনি বলেন,‘ এক পর্যায়ে শিরোপা জয়ের বিষয়টি অসম্ভব বলে মনে হচ্ছিল। কিন্তু ছেলেরা অসাধরন কাজ করেছে। তাদের বিষয়ে আমার আর কিছুই বলার নেই।’
অপরদিকে ১৯৯০, ১৯৯৬, ১৯৯৮, ২০০৪ এবং ২০১২ সালে বড় আসরে এই টাইব্রেকারই কাল হয়েছে ইংলিশদের জন্য। শুধুমাত্র ২০১৮ অনুষ্ঠিত বিশ^কাপের শেষ ষোলতে টাইব্রেকারে কলম্বিয়াকে হারাতে সক্ষম হয়েছিল সাউথ গেটের শিষ্যরা। তবে গতকাল থেকে সেই ব্যর্থতার জ¦ালা আবারো অনুভব করতে শুরু করেছে ইংলিশ ভক্তরা।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...