শিল্প অধ্যুষিত প্রাচ্যের ডান্ডি খ্যাত নারায়ণগঞ্জের (ডিএনডি বাধের ভেতরে) থেকে প্রাকৃতিকভাবে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের পথ বহু আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। এখন কৃত্রিম ও প্রাকৃতিক ব্যবস্থাপনার মিশেলে হয় পানিনিষ্কাশন। এরও সর্বোচ্চ ব্যবহার হয় না। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে চলা জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।
গত কয়েক দিনের বৃষ্টির পর আষাঢ়ের ৭ তম দিন সোমবার (২১ জুন) এমন সমস্যাই অনুসন্ধ্যানে উঠে এসেছে। ফলে এলাকাটির বিভিন্ন অংশ দিনের পর দিন ডুবে থাকছে পানিতে। এ চিত্র নতুন নয়, প্রতি বছরের বর্ষামৌসুমের। দীর্ঘদিন যাবৎ নানা আন্দোলন সংগ্রামের মাঝে মাঝে নেতাদের আশ্বাসে মন ভরতে হয় ডিএনডিবাসীদের।
ডিএনডির ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় বৃষ্টি হলে পানির সামান্য একটি অংশ মাটির নিচে যায়। বড় অংশই ছোট নালা, রাস্তার পাশের ক্যাচপিট (রাস্তার পাশে পানিনিষ্কাশনের ছোট পথ) হয়ে তুলনামূলকভাবে বড় আকৃতির নালায় পড়ে। সেখান থেকে পানি যায় খালে। এরপর পাম্পস্টেশনের মাধ্যমে পানি নদীতে গিয়ে জমা হয়। পুরো এই প্রক্রিয়ার কোথাও কোনো ব্যত্যয় ঘটলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বৃষ্টির পানিতে নর্দমা ও রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। এ নোংরা পানি পার হয়ে চলাচল করতে হচ্ছে এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের।
শিমরাইল পাম্প হাউজের দায়িত্বে থাকা উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আসরাফুজ্জামান জানান, ‘আমাদের পাম্প হাউজ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি পানি নিস্কাশন করতে। সেনাবাহিনীও ২টি পাম্প চালু রেখেছে। তাই পানি পাম্প হাউজ এলাকায় দ্রুতই কমে যাচ্ছে পানি।’
পাম্প হাউজ এলাকায় কম থাকলেও ফতুল্লায় কেন এত পানি? এমন প্রশ্নে উত্তর খোঁজতে গিয়ে বেড়িয়ে এসেছে এক ভয়ঙ্কর তথ্য।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় এলাকাটির পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন র্শীর্ষক প্রকল্পের কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
সেনাবাহিনীর তত্বাবধায়নে চলা প্রকল্পের আওতায় ২টি পাম্প স্টেশন, ৩টি পাম্পিং প্ল্যান্ট নির্মান, ৭৯টি আরসিসি কালভার্ট নির্মাণ, ২টি ক্রস ড্রেইন নির্মান, ১২টি আরসিসি গার্ডার ব্রীজ, ৫২টি বিদ্যমান ব্রীজ-কালভাট মেরামত, ৯৩.৯৮ কিলোমিটার নিস্কাশন খাল পুনঃখনন, ৩২৫০০ ঘন মিটার অতিরিক্ত সংযোগ খাল পুনঃখনন, ৯৩.৯৮ কিলোমিটার পুনঃখননকৃত স্পয়েল দ্বারা খালের তীর উন্নয়ন, ১৩. ৫০ কিলোমিটার হেরিংবোন ওয়াকওয়ে নির্মাণ হবে।
কিন্তু এই প্রকল্পেও নেই ড্রেনের কোন উন্নয়ন কাজ।
কোতালেরবাগ, দক্ষিণ সস্তাপুর, লালপুর, সেহাচর, মিজমিজির পাইনাদী, সিআইখোলা, কালাহাতিয়ার পাড়, নতুন মহল্লা, মজিববাগ, রসুলবাগ, নয়াআটি ও নিমাইকাশারীতে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশে পানিনিষ্কাশনের ছোট পথ (ড্রেন) গুলো ময়লা আবর্জনায় আটকা। খাল গুলোর গভীরতাও কম। কোথাও কোথাও ড্রেনও নেই। তাই সামান্য বৃষ্টির পানিও খালে নামতে পারছে না। এতে ময়লা আবর্জনা যুক্ত সেই পানিতে বাড়ি-ঘর পর্যন্ত তলিয়ে যাচ্ছে।
দুর্ভোগের এই কারণ স্বীকার করে সবচেয়ে বেশি জলজটের এলাকা ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান খন্দকার লুৎফর রহমান স্বপন জানান, ফতুল্লা কিংবা কুতুবপুরের কোন এলাকাই এখন আর ইউনিয়নের শ্রেণিতে পরে না। তারপরেও খাতা কলমে ইউনিয়ন হওয়ায় এলাকার রাস্তা-ড্রেন উন্নয়নে পর্যাপ্ত বরাদ্দও নেই। তাই নতুন করে উঁচু ড্রেন আর রাস্তা করা সম্ভব হচ্ছে না। খাল গুলোও পূর্বের মতো গভীর ভাবে খনন হচ্ছে না। ফলে নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন র্শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও সুফল কতটা পাবে ডিএনডির ফতুল্লা অংশের বাদিন্দারা, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...