• শনিবার, ৩১ মে ২০২৫, ০৬:১৮ অপরাহ্ন
  • |
  • Bangla Converter
  • |
শিরোনাম :
জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকীতে সাবেক ছাত্রনেতা রোমেনের শ্রদ্ধা ভোক্তা -অধিকার সংরক্ষণ আইন২০০৯ প্রচারের মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সেমিনার অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জে জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ উদ্বোধন স্বাধীন সাংবাদিকতা রাষ্ট্র মেরামতে সঠিক ভূমিকা রাখে নারায়ণগঞ্জে তিন দিনব্যাপী ভূমি মেলা ২০২৫-এর শুভ উদ্বোধন মানবিক সেবা’য় মানবাধিকার সংগঠনের ভূমিকা বিষয়ক আলোচনা শুধু ফলাফলনির্ভর শিক্ষা নয়, বরং শিক্ষার্থীদের নৈতিক, মানবিক ও বাস্তবজ্ঞানসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতেই হবে নারায়ণগঞ্জে তাঁতীদলের কর্মী সভা “আইন প্রণয়নের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আইন বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি প্রকল্প”শীর্ষক কর্মশালা আগামীর বাংলাদেশ হবে তারুণ্যের প্রতিভা ও কর্মে উদ্ভাসিতঃ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা

লিপির শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হওয়ার পিছনের গল্প

বিডিনিউজ আই ডেস্ক : / ৩৯৩ বার পঠিত
প্রকাশিত সময় : বুধবার, ২ জুন, ২০২১
২০১৯ সালে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষকের পদকের জন্য নির্বাচিত লিপি

ভালো চাকরির সুযোগ ছেড়ে পরিবারের ইচ্ছের বাইরে ২০০০ সালের ৪ এপ্রিল সহকারী প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে আত্মনিয়োগ করেন পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা সদরের মেয়ে খায়রুন নাহার লিপি। পারিবারিক অসম্মতির পরও মানুষ গড়ার ব্রত নিয়ে শুরু করেন তার পেশাগত জীবন। শেষ পর্যন্ত নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে আদর্শ শিক্ষক হিসেবে জেলা ও বিভাগে শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মর্যাদা লাভ করেন। ২০১৯ সালে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষকের পদকের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন লিপি।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি বলেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছোট নয় তা প্রমাণ করতে পেরেছি আমার পরিবারের কাছে। মানুষ গড়ার প্রত্যয়ে নিজেকে প্রস্তুত করেছি। কিন্তু আমার লড়াই এখনও শেষ হয়নি। যেদিন আমার ছাত্রছাত্রীরা মানবিক মানুষ হিসেবে সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, সেদিন আমার এ লড়াই শেষ হবে।’

সম্প্রতি জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হওয়ার বিষয় নিয়ে কথা হয় রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপির সঙ্গে।
লিপি জানান, ২০০০ সালে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থায় (এনএসআই) উপ-পরিদর্শক হিসেবে চাকরি পেলেও তা না করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন তিনি। শিক্ষকতাকে ব্রত হিসেবে নিতেই ২০০০ সালের ৪ এপ্রিল গলাচিপা উপজেলার ছৈলা বানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি জীবন শুরু হয় তার। তবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করা পছন্দ করেননি তার বাবা গলাচিপা উপজেলার তৎকালীন চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক মিয়া।

লিপি বলেন, ‘চাকরিতে যোগ দেওয়ার সময় আমার বাবা ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান। তিনি চাননি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে ছোট চাকরি করি। তাই চাকরি যাতে ছেড়ে দেই সে কারণে পটুয়াখালী সদরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আমাকে পদায়নের সুযোগ থাকলেও সদর থেকে দূরে ছৈলা বানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করতে হয়। কিন্তু আমি চাকরি ছাড়িনি।’

খায়রুন নাহার লিপি জানান, তার বাবা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক মিয়া ২০০২ সালে মারা যান। তবে মৃত্যুর আগেই মেয়ের শিক্ষকতাকে গুরুত্ব দেন। লিপি বলেন, ‘শিক্ষকতায় বেশি মনোযোগ দেখে এবং আমি শিক্ষকতা চাকরি ছাড়বো বুঝে অবশ্য আমার বাবা বিষয়টি পরে মেনে নিয়েছিলেন।’

নানা প্রতিবন্ধকতা থাকলেও নিজেকে আদর্শ শিক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে শামিল হন লিপি। দীর্ঘ ২০ বছরে নিজেকে আদর্শ শিক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। বর্তমানে মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন তিনি।

রাজনীতি করে কিংবা সমাজ সেবায় সরাসরি যুক্ত হলে মানুষের কল্যাণ করা যায় সহজে। তাহলে কেনও শিক্ষকতায় এলেন জানতে চাইলে বলেন, তখন আমার চাকরির প্রয়োজন ছিল যেমন, তেমনি শিক্ষক হবো এটি ছিল আমার সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয়।

শিক্ষক হয়ে ওঠার গল্প শুনতে চাইলে লিপি বলেন, ‘আমি আদর্শ শিক্ষক হয়ে ওঠার এখনও চেষ্টা করছি। আমার বাবা সুদীর্ঘ ২৫ বছর চেয়ারম্যান ছিলেন। ছোটবেলা থেকে পরিবার থেকে বিশেষ করে বাবাকে দেখেছি মানুষের সেবা করতে। আমার মা পৌর কাউন্সিলর। পারিবারিক বলয় থেকেই মানুষের সেবা করা দেখেছি। রাজনীতি করার সুযোগও ছিল আমার। তা আমি করিনি। তবে মানুষের সেবা করার জন্য বাবা-মায়ের যে প্রতিশ্রুত দেখেছি। তা থেকে মনে হয়েছে। মানুষের উপকার করা হচ্ছে সুন্দর সমাজ গড়ার জন্য। আর সে কারণেই মনে হয়েছে সমাজ গড়তে হলে মানুষ গড়া আগে দরকার। তাই রাজনীতি না করে, কিংবা অন্য কোনও ভালো চাকরি না করে শিক্ষকতা করাটা আমার কাছে বেশি ভালো মনে হয়েছে।

জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক হওয়ার বিষয়ে তার প্রতিক্রিয়ায় লিপি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার ভালোলাগা থেকেই আজকের এ স্বীকৃতি। আমার এ অর্জনের পেছনে আমার কোমলমতি শিক্ষার্থী, আমার পরিবার, সহকর্মী এবং বিভিন্ন জেলার অগণিত শিক্ষক ও শুভাকাঙ্ক্ষীর প্রচেষ্টা রয়েছে। আমি পেশাগত জীবনে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের মধ্যে নিজের স্বপ্ন বোনার চেষ্টা করেছি। একজন শিক্ষার্থীর মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ তৈরির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে চেয়েছি। পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের পাঠে মনোযোগী হওয়ার জন্য বাড়তি সময় ব্যয় করেছি। ’

ইডেন কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স-মাস্টার্স করেন খায়রুন নাহার লিপি। ২০০০ সালে শিক্ষকতা শুরুর পর ২০১৭ সালে ঢাকা জেলায় শ্রেষ্ঠ এবং ২০১৮ সালে ঢাকা বিভাগের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে স্বীকৃতি পান। এরপর ২০১৯ সালে দেশসেরা সহকারী শিক্ষক হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন। করোনার কারণে পদক প্রদান বন্ধ রয়েছে। ‘করোনাকালীন শিক্ষা, প্রতিযোগিতা ও আনন্দে’ শীর্ষক আইডিয়ার জন্য লিপি সেরা উদ্ভাবক হিসেবেও নির্বাচিত হয়েছেন।

খায়রুন নাহার লিপি জানান, পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের জন্য তিনি এমএড ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। শিক্ষকতা পেশায় এসে মাস্টার ট্রেইনার হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক সংস্থা লায়ন্সের একজন কর্মী হিসেবে কাজ করছেন তিনি।(বা,ট্রি)

আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...


এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..