• মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৫:৪৯ অপরাহ্ন
  • |
  • Bangla Converter
  • |
শিরোনাম :

আলমাছ যেন এরশাদ শিকদারের আরেক রূপ

বিডিনিউজ আই ডেস্ক : / ২৭০ বার পঠিত
প্রকাশিত সময় : বুধবার, ২ জুন, ২০২১

রূপগঞ্জের তোফায়েল আহমেদ আলমাছ ওরফে আলমাছ চেয়ারম্যান মানেই ভয়ঙ্কর এক মূর্তমান আতঙ্ক। একাধিক হত্যা মামলাসহ বহু অপকর্মের খল নায়ক তিনি। সর্বশেষ তার বিরুদ্ধে যুবলীগ কর্মী সোলাইমান হত্যায় মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার প্রকাশ্য দিবালোকে ইট দিয়ে থেঁতলে ও কুপিয়ে এই যুবককে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় বুধবার (২ জুন) তাকে প্রধান করে হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের ছোট ভাই রাজীব মিয়া।
এক সময় বিএনপি করা আলমাছ ক্ষমতাসীন দলের ছত্রচ্ছায়াতে মুড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেন। বর্তমানে ওই এলাকায় তার থেকে বড় আওয়ামী লীগার দ্বিতীয় আর নেই। তার রয়েছে বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী। অস্ত্রধারি তিনজন বডিগার্ড নিয়ে নিয়মিত চলাফেরা করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া তার বাহিনীর কাছে অবৈধ অস্ত্র রয়েছে বলেও শোনা যায়।
২০১৬ সালে রূপগঞ্জ উপজেলার মুড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ ওরফে আলমাছ তিনজন সশস্ত্র দেহরক্ষী নিয়ে জাতীয় শোক দিবসে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেন। ঘটনার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ওই কর্মসূচিতে তিনজন সশস্ত্র দেহরক্ষী নিয়ে অংশ নেন তোফায়েল। তিন দেহরক্ষীর প্রত্যেকের হাতে একটি শটগান ও কোমরে গুলি বহনের বেল্ট ছিল। এই ঘটনায় ওই সময় আলমাছ জানিয়েছিলেন, একজন তার ব্যক্তিগত দেহরক্ষী হিসেবে কাজ করছেন। তার নাম জিয়া। অন্যজনের নাম যুবায়ের।
এদিকে গত বছরের আট সেপ্টেম্বর রূপগঞ্জ প্রেস ক্লাবে আলমাছ চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়। ওইসময় পুলিশি তৎপরতায় অস্ত্রধারীদের হাত থেকে বেঁচে যান ক্লাবে অবস্থানরত সাংবাদিকরা। ঘটনাস্থল থেকে দুজনকে আটকও করেছিল পুলিশ। তারা হলেন, হলেন উপজেলার দড়িকান্দি এলাকার আলী হোসেনের ছেলে দিলিপ ও সরকারপাড়া এলাকার নঈমুলের ছেলে সিব্বির।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০০ সালের আগস্টে মুড়াপাড়া এলাকার টঙ্গীরঘাট এলাকার ব্যবসায়ী রাসেল ভুঁইয়াকে রাসেল পার্কে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। এরপর ওই হত্যা মামলার প্রধান আসামি তোফায়েল আহাম্মেদ আলমাছের উত্থান হয়। বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে সন্ত্রাসী কর্মকা- করে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। ওই সময় আলমাছ বিএনপি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। পরে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে ২০১৬ সালে মুড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকেই চেয়ারম্যানের অস্ত্রধারী বাহিনী এলাকায় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজিসহ অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে।
সূত্র জানায়, চেয়ারম্যান হওয়ার সুবাধে গত ৫ বছরে শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। মুড়াপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ, টিআর-কাবিটা প্রকল্পের টাকা লোপাট, এলজিএসপির টাকা লোপাট, বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজির বদৌলতে ঢাকার অভিজাত এলাকায় ফ্ল্যাট, বাড়ি-গাড়ির মালিক বনে গেছে।
এদিকে জমি দখল, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকা- আলমাছ ও তার বাহিনীর নিত্যনৈমিত্তিক কাজ। ২০১৮ সালের ২৯ আগস্ট আলমাছ ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী একটি সরকারি জমির দখল নিতে গিয়ে জমির লিজ গ্রহীতার বাড়িতে দফায় দফায় হামলা চালিয়েছে ও লিজ গ্রহীতাকে মারধর করে। সূত্র জানায়, ওই জমির সুরক্ষায় কাঁটাতারের বেড়া দিতে গেলে চেয়ারম্যানের ক্যাডার দেলোয়ার, মামুন, মাহফুজসহ অর্ধশতাধিক সন্ত্রাসী ধারালো অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সাখাওয়াতের বাড়িতে দফায় দফায় হামলা চালায়। হামলাকারীরা বাড়ির প্রধান ফটক ও বসত ঘর রামদা চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
স্থানীয়দের কাছে ভয়ঙ্কর এরশাদ শিকদারের আরেক রূপ হচ্ছেন আলমাছ চেয়ারম্যান। পুরো মুড়াপাড়াবাসি সন্ত্রাসীদের এই গডফাদের ভয়ে তটস্থ থাকে সবসময়। তার বিরুদ্ধে কেউ কোনো টু শব্দ করলেই তার উপর নেমে আসের নির্যাতনের খড়গ। এলাকার যুবলীগ কর্মী সোলাইমানের সাথে দ্বন্দ্ব ছিল আলমাছ ও তার বাহিনীর। এলাকার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রায় সময় সোলাইমান গ্রুপের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটতো। আলমাছের রোষানলে পড়ে একাধিক মামলার আসামীও হয়েছিল এই সোলাইমান, দাবি পরিবারের। সর্বশেষ মঙ্গলবার (১ জুন) সোলাইমানকে নিজের মাছের খামার থেকে ধরে নিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে ও কুপিয়ে হত্যা করে আলমাছ বাহিনী। এর আগে ২৮ মে সোলাইমানের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন আলমাছ।
সোলাইমান হত্যায় প্রধান অভিযুক্ত চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ আলমাছের নামে সোলাইমান হত্যা ছাড়াও ২০০৪ সালে বানিয়াদি এলাকার শমসের, ২০০৮ সালে মীরকুঠিরছ এলাকার নয়ন, ২০১২ সালে ছাত্রদল নেতা নজরুল ইসলাম বাবু, ২০১৩ সালে তার পিতা জালাল ও একই বছর যুবলীগ নেতা শওকতকে খুনের পেছনে রয়েছে আলমাছ ও তার বাহিনীর নাম।
এছাড়া উপজেলা বিএনপি নেতা রাসেল ভূইয়া হত্যা মামলায় ফাঁসির দন্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামী ছিলেন এই আলমাছ। পরে উচ্চ আদালতে তাকে দন্ডাদেশ মওকুফ করে খালাস দেয়া হয়।
প্রয়াত উপজেলা চেয়ারম্যান জামাল হাজির ছেলে মুড়াপাড়া কলেজের সাবেক ভিপি খালেদ বিন জামালের হাত ধরে নব্বইয়ের দশকে আলমাছের উত্থান ঘটে। খালেদ বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করাকালেই আলমাছ টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিসহ, লোক ঠ্যাংঙ্গানোসহ নানা অপকর্মে যুক্ত হন। সন্ত্রাসী হামলায় ১৯৯১ সালে খালেদ নিহত হলে সব কিছু চলে যায় আলমাছের দখলে। এরই একপর্যায়ে ২০০০ সালে দিনদুপুরে রাসেল পার্কের ভিতরে আলমাছ ও তার সহযোগীরা প্রকাশ্যে হত্যা করে বিএনপি নেতা ও শিল্পপতি রাসেল ভুইয়াকে।
সেই মামলায় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের রায়ে তার ফাঁসির আদেশ হলে উচ্চ আদালতে আপিল করেন। পরে মামলায় খালাস পেয়ে কিছুটা আড়ালে চলে যান। ২০০৪ সাল থেকে শুরু করেন বিভিন্ন মিল-কারখানার মালিকদের জমিজমা জবরদখলে সহযোগিতা। চুক্তির ভিত্তিতে তিনি জমির দখল বুঝিয়ে দিতেন। এই সময়ে তিনি বিভিন্ন হাউজিংয়ের ভাড়াটে ক্যাডার হিসেবে কাজ করতেন। এ ছাড়া বিভিন্নজনকে হুমকি দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করতে থাকেন। পাশাপাশি অস্ত্রের ব্যবসা শুরু করে গড়ে তোলেন অস্ত্রধারী বাহিনী।

এ বিষয় আরো সংবাদ…

যুবক হত্যায় চেয়ারম্যানসহ আসামী ২১

রূপগঞ্জে যুবককে হত্যা

 

আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...


এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..