• শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:৩৫ পূর্বাহ্ন
  • |
  • Bangla Converter
  • |
শিরোনাম :

মেয়র আইভীকে ভৌতিক অভিযোগে দূর্নীতিবাজ বানানোর চেষ্টা

বিডিনিউজ আই ডেস্ক : / ৩৯০ বার পঠিত
প্রকাশিত সময় : বৃহস্পতিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২১
মেয়র আইভী

বিডি নিউজ আই: সকল ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হবার পর এবার মেয়র আইভীকে নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন নাটক। সেই ভৌতিক অভিযোগে চেষ্টা করা হয়েছে দূর্নীতিবাজ বানানোর। এর আগেও দূর্নীতির সংসদের দাড়িয়ে খোদ শামীম ওসমান অভিযোগ তুলেছিলেন। তদন্ত করেছে দুদক। ফল শুন্য। কোন কিছুই প্রমানিত না হওয়ার রিপোর্ট জমা দেয় দুদক। এবার তিনি নিজে অভিযোগকারী নন। অভিযোগ করেছেন, ঢাকায় বসবাসকারী জনৈক হাফিজুর রহমান নামে এক ব্যক্তি। এ নাটকের নাট্যকার খোদ আওয়ামীলীগের একজন বির্তকিত এমপি।

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে জব্দ করতে তাঁর প্রতিপক্ষরা কম চেষ্টা করেনি। তাকে জব্দ করতে কল্পিত দুর্নীতির অভিযোগ তুলে জনতার আদালত, ব্যঙ্গচিত্র তৈরি, দেবোত্তর সম্পত্তি দখল, মসজিদ-মন্দির ইস্যুতে উত্তেজনা তৈরিসহ নানা চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কোনো ষড়যন্ত্রেই সফল হতে পারেনি তারা।

এবার সততা ও কর্মনিষ্ঠার পরিচয়ে নন্দিত মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে ঢাকার এক ব্যক্তিকে দিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ দায়ের করেছেন প্রভাবশালী সেই পক্ষটি। এমনটিই অভিযোগ আইভী ঘনিষ্ঠ নেতা-কর্মীদের। গণমাধ্যমেও সেই খবর এসেছে। এদিকে আইভীর কর্মী-সমর্থকরা বলছেন, সিটি নির্বাচনের পূর্বমুহুর্তে আবারও একটি মহল পুরোনো খেলায় মেতে উঠেছে। আইভীকে জব্দ করতে নিত্যনতুন কৌশল তো কাজে লাগাচ্ছেই তার সাথে যোগ হয়েছে দুদকে দেওয়া দুর্নীতির অভিযোগ।

গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ সেপ্টেম্বর হাফিজুর রহমান নামে এক ব্যক্তি দুদকে মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে লিখিত দিয়েছেন। ওই ব্যক্তির বিস্তারিত পরিচয় না জানা গেলেও তিনি ঢাকার বাসিন্দা বলে একটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

হাফিজুর নামে ওই ব্যক্তির অভিযোগ, ২০১১ সালে টেন্ডার হওয়া নারায়ণগঞ্জ সিটি (পৌর পাঠাগার) পাঠাগারটির ব্যয় দুর্নীতি করে তিন কোটি টাকা থেকে ২৬ কোটি টাকা করা হয়েছে। এদিকে জানা গেছে, পুরোনো আলী আহাম্মদ চুনকা পৌর পাঠাগার ভেঙ্গে নতুন করে বৃহৎ আকারে আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার ও মিলনায়তন নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে প্রায় দেড়শ’ আসন সমৃদ্ধ মিলনায়তন, শতাধিক আসনের পরীক্ষণ হল রয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় রয়েছে প্রদর্শনী কক্ষও। আছে মুজিব কর্নার। জেলার একমাত্র মিনিপ্লেক্সটিও (ছোট আকারের সিনেপ্লেক্স) এই পাঠাগারের পাতাল মেঝেতে স্থাপন করা হয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এই পাঁচ তলার ভবন নির্মাণের ব্যয় বেড়েছে।

দুদকে করা অভিযোগে দু’টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সিটির উন্নয়ন কাজের ৮০ ভাগ সম্পন্ন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে সিটি কর্পোরেশন বলছে, ই-টেন্ডারের মাধ্যমে আহ্বান করা দরপত্রে স্বজনপ্রীতি বা কাউকে নির্দিষ্ট করে ওয়ার্কঅর্ডার দেওয়ার সুযোগ নেই। সঠিক নিয়ম মেনে সারাদেশের যেকেউই ঠিকাদারি কাজ পেতে পারেন।

এদিকে দুদকে করা অভিযোগে নারায়ণগঞ্জ শহরের বৃহৎ দু’টি প্রকল্পে অনিয়মের কথা বলা হয়েছে। তবে এই দুই প্রকল্পের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ নগরীর চেহারা বদলে যাচ্ছে। প্রকল্প দু’টি হলো শেখ রাসেল নগর পার্ক ও সিদ্ধিরগঞ্জ খাল পুনুরুদ্ধার ও সৌন্দর্যবর্ধন কাজ।

শত কোটি টাকা ব্যয়ে খাল উদ্ধার ও সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের কারণে সিদ্ধিরগঞ্জের চেনা রূপ বদলে যাচ্ছে। অন্যদিকে শহরের বুকে শ্বাস নেওয়ার মতো স্থান তৈরি হয়েছে শেখ রাসেল নগর পার্ক নির্মাণের মাধ্যমে। চারদিকে সবুজে ঘেরা পার্কের মাঝখানে সুদীর্ঘ লেকপাড়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষের ভিড় জমে।

মসজিদ কমিটির এক মামলার কারণে শহরের মন্ডলপাড়ার জিমখানা এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প জেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক কালচারাল সেন্টার নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে আছে। সেই স্থানের একটি মসজিদের জায়গা দখলের অভিযোগ করা হয়েছে দুদকে। তবে এই বিষয়ে ইতঃপূর্বে মেয়র দাবি করেছেন ওয়াকফা করা সম্পত্তি দখলের কোন সুযোগ নেই। বরঞ্চ তাঁর বিরুদ্ধ শক্তি মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ বাধাগ্রস্থ করতেই মসজিদ কমিটির একজনকে দিয়ে এই মামলা করেছেন।

অভিযোগ করা হয়েছে, পৈত্রিক সূত্রে তিনি ১২ শতাংশ জমি পেয়েছেন, যার দলিল মূলে দাম ৩৬ লাখ ৬৪ হাজার। এই সম্পদ তিনি আয়কর রিটার্নে দেখাননি। কিন্তু এই ১২ শতাংশ জমি তিনি একটি মাদ্রাসা নির্মাণে দান করে দিছেন ২০১৫ সালেই। দেওভোগ আলী আহম্মদ চুনকা সড়কের ওই জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে হোসাইনিয়া মমতাজিয়া চুনকা সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসা (এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিং)।

দেওভোগে দেবোত্তর সম্পত্তি দখলের অভিযোগও করা হয়েছে দুদকে। ওই সম্পত্তি নিয়ে শহরে একাধিকবার সভা-সমাবেশ করেছে একটি মহল। যদিও মেয়র বারবার বলেছেন, ওই সম্পত্তি ১৯৭৯ সালে তার নানার ক্রয়কৃত সম্পত্তি। সেই সম্পত্তির আরও ৩৫ অংশীদার আছেন। তাকে জব্দ করতেই দেবোত্তর সম্পত্তি দখলের অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে। শহরের দুই নম্বর রেলগেইটে জরাজীর্ণ রহমতউল্লাহ ইনস্টিটিউট ভেঙে বঙ্গবন্ধু চত্ত্বর নির্মাণ করেছেন সিটি মেয়র আইভী। এই বঙ্গবন্ধু চত্ত্বর নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে ওই অভিযোগপত্রে।

দুদকে করা এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের শুরু হয়েছে এক বছর আগে থেকেই। সিটি নির্বাচন আসলেই একটি মহলের মাথা ঠিক থাকে না। তারা নানা খেলায় মেতে ওঠেন। কখনও দেবোত্তর সম্পত্তির নামে, কখনও মসজিদ-মাদরাসার নামে বিভিন্ন সম্প্রদায়কে উস্কে দিতে চান। তবে কাজের কাজ কিছুই হয় না। কেননা নারায়ণগঞ্জবাসী আইভীকে সৎ, কর্মনিষ্ঠ ও উন্নয়নকামী একজন নেতা হিসেবে চেনেন। মানুষের এই ধারণা যে তারা বদলে দিতে পারবে না সেটা জেনেও নানা বৃথা চেষ্টা চালায়।

দুদকে করা দুর্নীতির অভিযোগ নতুন কিছু নয়। এই খেলা আগেও হয়েছে। পুরোনো কৌশলে নতুনভাবে আইভীকে জব্দের চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। তবে এসব অভিযোগের পেছনে একটি মহল কাজ করছে। তাদের উদ্দেশ্য নারায়ণগঞ্জের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের কাজকে বাধাগ্রস্থ করা। উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতেই এসব করা হচ্ছে বলেই মন্তব্য করেছেন দলীয় নেতারা। তারা বলেন, বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনার নামকরণ করাকেও সহজভাবে নিতে পারছে না অন্ধকারে থাকা সেই শক্তি। তাই তারা বেছে বেছে এমন সব প্রকল্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন যেগুলোতে কোনো না কোনোভাবে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের স্মৃতি রক্ষায় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, এর আগেও দুদকে মেয়রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছিল। দ্বিতীয় দফায় নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের কয়েক মাস পূর্বে ২০১৫ সালের এপ্রিলে সিটি মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সংসদে বক্তব্য রাখেন সাংসদ শামীম ওসমান। ওই সময় আইভীর বিরুদ্ধে পঞ্চবটিতে পার্ক নির্মাণ, দোকান ও ফ্ল্যাট বরাদ্দের অনিয়মসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়। তবে মেয়রের বিরুদ্ধে সাংসদের উত্থাপিত দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান শেষে ২০১৭ সালের অক্টোবরে তা পরিসমাপ্ত করে দুদক। মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি বা অনিয়মের কোনো প্রমাণই পায়নি দুদক।

আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...


এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..